এক হাজির বর্ণণায় মিনার দুর্ঘটনা

সংবাদদাতা ।।
‘মিনার দুর্ঘটনার দিন স্ত্রীর হাত ধরে একসঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ হাজিদের ভিড়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা হয়ে গেলাম। শরীরটা খুব দুর্বল লাগছিল। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে।’ বিদেশ-বিভূঁইয়ে কষ্টের কথা এভাবেই আমাদের প্রতিনিধির কাছে বলছিলেন শেরপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবদুর রহমান।
স্কুলশিক্ষক আরো বললেন, ‘কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে দেখি, এক হাজি আমার মাথায় পানি দিচ্ছেন। একটু সম্বিত ফিরে খেয়াল করলাম, আমার স্ত্রী নাই পাশে। অনেক কান্নাকাটি করলাম হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ শুনল না। পাশে একটা লোক যাচ্ছিল। পৌঁছে দিতে বললে সে টাকা দাবি করে। টাকা দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ হাতে নিতেই হাত থেকে টান মেরে ব্যাগ ছিনিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল সে।’
কাঁদতে কাঁদতে স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘অনেক কষ্টে হোটেলে এসে দেখি, স্ত্রী আমাকে না পেয়ে খুব কান্নাকাটি করছে। তাঁকে ব্যাগ হারানোর কথা জানালাম। ব্যাগে মেয়েদের জন্য কিছু কিনব বলে ছয় হাজার রিয়াল, বাংলাদেশের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা এনেছিলাম। সব নিমেষে নাই হয়ে গেল।’
আবদুর রহমান জানান, একেবারে নিঃস্ব হয়ে হজে আসা এক সহকর্মীর কাছ থেকে ১০০ রিয়াল ধার করতে হয়েছিল তাঁকে। অথচ গত ১০ বছর টিউশনির টাকা ও স্কুলের বেতন থেকে কিছু অংশ জমিয়ে হজে এসেছিলেন তিনি।
তবে সব হারিয়েও কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই পরহেজগার এই স্কুলশিক্ষকের। তিনি বলেন, ‘কষ্ট তো হয়েছে ভাই। তবে সবই আল্লাহর ইচ্ছা।’ এটুকু বলে সৃষ্টিকর্তার কাছেই সব কষ্ট জমা করে রাখলেন অসহায় এই মানুষটি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!