হাটহাজারীতে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে গতিরোধক নেই

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।

হাটহাজারী উপজেলা সদরে ৪টি সহ উপজেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে গতিরোধক না থাকায় যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পারাপার হচ্ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান মহাসড়ক ও উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের সাথে লাগোয়া। আর প্রবেশের মূল ফটকও সড়কের সাথে লাগিয়ে নির্মাণ করার কারণে শিক্ষার্থীদের কম-বেশি দুর্ঘটনায় পড়তে হয় সব সময়। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা সুনির্দিষ্ট কেউ বলতে পারছে না।

এদিকে গত (৭ আগস্ট ২০১৮) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের পাশে মেখল ইউনিয়নের রহিমপুর জান আলী চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী শাহীনুর সুলতানা সোহা পরীক্ষা শেষে দপ্তরি তাকে মহাসড়ক পার করিয়ে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ রাউজানমুখী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় সে মাথায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ২২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রতিদিন কোনো-না-কোনো স্কুলের সামনে এরকম দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হচ্ছে।

হাটহাজারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি স্কুলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি একটি স্পিড ব্রেকার দেয়ার জন্য। স্কুলের সামনে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে বিগত ৫-৬ বছরে কম হলেও অর্ধশতাধিক ছাত্র/ছাত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। চালকরা বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অসতর্কতার কারণে এ সব দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে আসছে।

হাটহাজারী সরকারি পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সাকিব জানালো, গাড়ির চালকেরা বিদ্যালয়ের সামনে আসলেও গাড়ির গতি কমায় না। তাই তাড়াহুড়ো করে সড়ক পার হতে গিয়ে প্রায়শই কমবেশি দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। হাটহাজারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র মুবাশ্বের কাউনাইন জানালো, আমাদের ক্লাসের সময় উচ্চৈঃশব্দে হাইড্রোলিক হর্ণ বাজিয়ে আমাদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি ছুটির সময় রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গাড়ি চালকদের গতিরোধের অপেক্ষায়। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে আসা ও ছুটির সময় সড়ক পার হতে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিতে হচ্ছে আমাদের।

সরেজমিন উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি ব্যস্ততম মহাসড়কে হাটহাজারী কলেজ গেইট, উপজেলা গেইট, করিয়ার দিঘী পাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ, মেখল জান আলী চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপুর ফজলুল কাদের উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরীহাটস্থ ফতেয়াবাদ কলেজ, ফতেয়াবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেয়াবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মির্জাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুইয়াশ কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়, ফরহাদবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাটিরহাট মহিলা কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলা অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে সড়কে কোনো স্পিড ব্রেকার নেই যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সামনে জরুরি ভিত্তিতে স্পিড ব্রেকারের প্রয়োজন বলে জানান এখানকার সচেতন লোকজন।

হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জসিম বলেন, হাটহাজারী কলেজ গেইট এলাকায় স্পিড ব্রেকার না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র/ছাত্রীরা হতাহত হচ্ছে বেশি। গাড়ি গতিরোধ কারণে এ সব দুর্ঘটনা মূল কারণ বলে তিনি জানান। হাটহাজারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ জানান, স্পিড ব্রেকার না থাকায় আমার স্কুলের ছাত্রীরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে গাড়ি গতিরোধ না করার কারণে। তিনি দাবি করেন রাস্তার পাশে সবক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সামনে গতিরোধক নির্মাণ করা গেলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিরাপদ হবে এবং দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী বলেন, শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছে। গতিরোধক নির্মাণ করা গেলে ঝুঁকি হ্রাস পাবে। আমি ইতিমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা সম্প্রতি এসে দেখে গেছেন। আশা করি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Similar Posts

error: Content is protected !!