মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেজাল মশলা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিক গুঁড়ো মশলায় ভেজাল মিশিয়ে বাজারজাত করছে বলে জানা গেছে। এসব মশলার বেশিরভাগই বিএসটিআই-এর অনুমোদন নেই বলেও জানা যায়। তবে প্যাকেটের উপরে সিল-ছাপ দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো আসল নাকি ভেজাল।
আবার অনেকে প্যাকেটের গায়ে ভুয়া বিএসটিআই-এর সিল ব্যবহার করে বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো তদারকি এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। হাটহাজারী উপজেলার বাজারগুলোতে ঘুরে জানা গেছে, ভেজাল গুঁড়ো মশলার রমরমা ব্যবসা। নামে-বেনামে বাজারজাতকৃত গুঁড়ো মশলার প্যাকেটে উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ, ব্যাচ নং ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কিছুই লেখা নেই। প্যাকেটের গায়ে শুধু হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম ঠিকানা লেখা আছে। আবার অনেক প্যাকেটে নেই নাম ঠিকানাও। এসব গুঁড়ো মশলার প্যাকেটের গায়ে ১০০ ভাগ গ্যারান্টিযুক্ত নির্ভেজাল কথাটি লেখা রয়েছে। এ ধরনের অসংখ্য নামের গুঁড়ো মশলায় সয়লাব হয়েছে হাটহাজারী বাজার ও উপজেলা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলো।
সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দেড় শতাধিক মিল বাণিজ্যিকভাবে গুঁড়ো মশলা তৈরি করে। এর মধ্যে মাত্র প্রায় ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদনহীনভাবেই মশলা তৈরি করে বিক্রি করছে। খাতুনগঞ্জের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গুঁড়ো মশলা তৈরিতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিলেও বাকি ১২-১৫টি প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন নেই। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার টন ভেজাল মশলা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় মরিচ, হলুদ ও মশলা মাড়াইকারী মিলের মালিকরাও ভেজাল গুঁড়ো মশলা তৈরি করে বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাটহাজারী বাজারের রঙ্গিপাড়া সড়কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল শ্রমিক মরিচ, হলুদ ও মশলা ভেজাল করার কথা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, গাছের গুঁড়ি ও ধানের কুঁড়ার সঙ্গে রঙ মিশিয়ে তৈরি ভেজাল ধনিয়া প্রতি কেজি পাইকারিতে বিক্রি হয় ১৪০-১৬০ টাকায়।
অন্যদিকে ৫০ কেজি গাছের গুঁড়ি বা কুঁড়া, নিম্নমানের ১০ কেজি শুকনো মরিচ, ৫ আউন্স কমলা রঙ, ১ আউন্স লাল রঙ মিশিয়ে মিলিং শেষে পাওয়া যায় ৫৫ কেজি মরিচের গুঁড়ো। মিলিং খরচসহ কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৪০-৪৫ টাকা। ভেজাল এ মরিচের গুঁড়ো পাইকারি পর্যায়ে ৬০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে। একইভাবে ৫০ কেজি ভুষি বা ধানের কুঁড়ার সঙ্গে ৫ কেজি আস্ত হলুদ, ৫ আউন্স কমলা রঙ মিশিয়ে মিলিং করে পাওয়া যায় ৫০ কেজি গুঁড়ো হলুদ। এ হলুদ প্রতি কেজি ৭০/৮০ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৮০/২০০ টাকায়। চিকনজিরা বিক্রি হচ্ছে ৫শত টাকা, মিষ্টি জিরা ৩শত টাকা, মরিচ বিদেশী ২২০, দেশী ২৮০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।
হাটহাজারী বাজার ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গুদামে এসব গুঁড়ো মশলা মজুদ রাখা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ সুযোগে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ভেজাল গুঁড়ো মশলা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হাটহাজারী বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এসব গুঁড়ো মশলা অবাধে বাজারে বিক্রি করলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। এ ছাড়া এদের অনেকের ঠিকানাও ভুয়া বলে জানা গেছে।
এদিকে হাটহাজারী সদরের এক ব্যবসায়ীর কাছে সিন্ডিকেট বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো সিন্ডিকেট আমাদের নেই। যদিও কেউ বলে থাকে তা মিথ্যা।