মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ উদালিয়া সোনাইরকুল দুর্গম ত্রিপুরাপল্লীতে গত এক সপ্তাহে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের ৩ শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই উপজাতীয় পল্লীতে আরো ২১ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক। আশংকাজনক তিনজনকে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোববার (২৬ আগস্ট ২০১৮) হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম ত্রিপুরা পল্লী পরিদর্শন করে।
জানা যায়, উপজেলার ত্রিপুরা পল্লী এলাকায় গত (২১ আগস্ট) মঙ্গলবার অন্ন রায় ত্রিপুরা (৫) এবং কিশা মনি ত্রিপুরা (৩) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। ২৪ আগস্ট শুক্রবার সমরায় ত্রিপুরা (৪) নামে এক শিশু মারা যায়। অন্ন বালা ত্রিপুরা (৭) নামে এক শিশু রোববার (২৬ আগস্ট) মারা গেছে। এ নিয়ে শেম কুমার ত্রিপুরার পরিবারের তিন শিশুর মৃত্যু হয়। এতে করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পাশাপাশি এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়লে পুরো দুর্গম ত্রিপুরাপল্লী যেন অসহায় হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রোববার সকালের দিকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা কর্মকার্তা ডাক্তার আবু সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইনের নেতৃত্বে মোট ৬ জন চিকিৎসক সেখানে গিয়ে বেছে বেছে মোট ২১ জন রোগীকে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐ এলাকায় প্রায় ৫৫টি পরিবারের ৪শত লোকের বসবাস হল এ দুর্গম ত্রিপুরাপল্লী। এই পল্লীতে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও ডাক্তাররা নিয়মিত আসে না। ফলে সেখানে রোগীও তেমন আশার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা প্রতিনিধিকে জানান, দীর্ঘদিন পূর্বে একবার একজন স্বাস্থ্যকর্মী এলেও আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের কোন খবর রাখেনি। বর্তমানে আমরা আতংকে বসবাস করছি। আরো অনেক শিশুই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
ত্রিপুরাপল্লী এলাকার বনকুমার ত্রিপুরা জানান, প্রথমে শিশুদের শরীরে জ্বর, তারপর শরীরে এক ধরনের বিরল ঘা বা বিচি পুরো শরীর বিস্তার করে। এরপর খিচুনি শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে শিশুরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। স্থানীয় কয়েকজন এ প্রতিবেদককে জানান, উক্ত এলাকায় চিকনগুনিয়া রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এমন আশংকা করছেন অনেকেই।
গত মঙ্গলবার থেকে রোববার পর্যন্ত উক্ত এলাকায় সামকুমার ত্রিপুরার পরিবারের তিন ছেলেসহ মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়। তারা হল অন্নরায় ত্রিপুরা (৫), সমরায় ত্রিপুরা (৩), অন্যবালি ত্রিপুরা (৭) ও শিমুলী ত্রিপুরা (৭)। এদিকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার মোট ২১ জনকে ভর্তি করে। তারা হল মেঞ্জন চাকমা, সোনালী চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, শিশুল ত্রিপুরা, স্বপ্না ত্রিপুরা, রিপন, রিপা, রোলা ত্রিপুরা, ইমারানী, বিজলী ত্রিপুরা, কিরনবালা, রণি, রুপা ত্রিপুরা, রোপন কুমার ত্রিপুরা, সুকন্দ ত্রিপুরা গোলধন, শিমা রাণী, বিজয় ত্রিপুরা, লক্ষণ, গীতা রাণী, শুভরাণী। এদের মধ্যে গোপাল চাকমা, মেঞ্জন চাকমা, সোনালী ত্রিপুরা এই তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টি এইচ ও) ডাঃ আবু সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন জানান, ত্রিপুরা এলাকায় এখনো কি রোগ তা নির্ণয় করা যাচ্ছে না। গুরুতর অসুস্থ ৫ জনের রক্তের নমুনা নিয়ে ঢাকার আই,ই,ডি,সি,আর-এ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তবে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম গিয়ে উক্ত ত্রিপুরা পল্লী এলাকায় প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে তাদেরকে চিকিৎসা দেয়ার কথা রয়েছে।