আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর খাদ্যের সঙ্গে ভয়াবহ ওষুধ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। দেশে তখন ২০ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। বাকি ৮০ শতাংশ ওষুধ আসবে কোত্থেকে! পাকিস্তান দিতে পারলেও স্বাধীনতার পর তারা ওষুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়।
স্বাধীন দেশে ডলারের রিজার্ভ শূন্য থাকায় ইউরোপ, আমেরিকার বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিও ওষুধ দিতে রাজি হয়নি। তবে ওই দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরি। সেখানকার ওষুধ সংস্থা ইগিস, গেইডেন, রিখটার কাইরন, মেডিম্পেস বাংলাদেশে ওষুধ সরবরাহে রাজি হয়।
তারা জানিয়ে দেয়, বার্টার সিস্টেমে বা পণ্যের বিনিময়ে ওষুধ দেবে। হাঙ্গেরিতে যেতে লাগল বাংলাদেশের পাট আর অন্যান্য কাঁচা পণ্য। পরিবর্তে এলো ওষুধ। এর পর ধীরে ধীরে ওষুধ উৎপাদন শুরু হয় বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পর দেশে অনেক ওষুধ আমদানি করতে হতো।
কিন্তু বর্তমানে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের তৈরি ওষুধ চাহিদা মেটাবে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৫৭ দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। সবচেয়ে বেশি ওষুধ রফতানি হচ্ছে মিয়ানমারে।
অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশের ওষুধ। যে কারণে রফতানির পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৫৩ কোম্পানির তৈরিকৃত ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা যাচ্ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১৪ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি খাতে আয় হয়। আরও বিগত ছয় বছরে অর্থাৎ ২০১১-২০১৭ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। তবে ওষুধ রফতানিকারকরা মনে করছেন এ রফতানি আয় তুলনামূলক কম। রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করছেন।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে ওষুধ রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩৮৬ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫৪ কোটি টাকা। এর পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে হয় ৫৪১ কোটি টাকা। এর পর আবার রফতানি আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয় ৬৫৭ কোটি টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে আয় করে ৭১৪ কোটি টাকা।
ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানির অনুমোদন পেয়েছে। ফলে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রফতানির দরজা খুলছে।
সূত্র : যুগান্তর, ২৬ আগস্ট ২০১৮