৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকদের তালিকা হচ্ছে

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ব্যক্তিমালিকানায় কৃষিজমির সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন করে প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত জমি নিজ নামে রেখে ভোগদখল করছেন দারাজ আলী। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়া গ্রামে। একজনের নামে ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি রাখা অবৈধ। অথচ দারাজ আলী নিজ নামে ৮৩ বিঘা জমি ভোগদখল করছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নেওয়া বিশেষ উদ্যোগে বেরিয়ে এসেছে দারাজ আলীর নাম। তাঁর নামে থাকা অতিরিক্ত জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই এলাকার লোহাকাচি গ্রামের এবাজুল হকের সন্তান হাসান আলীও অতিরিক্ত সাড়ে ১০ বিঘা জমি ভোগদখল করছেন। আর পেদিয়াগছ গ্রামের হাসিম মণ্ডলের ছেলে ইলিয়াস আলী মণ্ডল প্রায় পাঁচ বিঘা জমি নিজের নামে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব জোতদারের মতো সারা দেশেই অসংখ্য ব্যক্তি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কৃষিজমির ঊর্ধ্বসীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত জমি ভোগদখল করছেন। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তালিকা পাওয়ার পর ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত জমি সরকারের অনুকূলে নেওয়া হবে। পরে তা খাস খতিয়ানভুক্ত করে ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। তবে ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রমকারীরা চাইলে সরকারের কাছ থেকে খাসজমি লিজ নিয়ে ভোগদখলের সুযোগ নিতে পারবে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম হীরা বলেন, তথ্য গোপন করে বাড়তি কৃষিজমি নিজের নামে রাখা এক ধরনের প্রতারণা। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসার পর বিষয়টি নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। এরপর সংসদীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু এলাকার ঊর্ধ্বসীমা লঙ্ঘনকারীদের তালিকা কমিটির কাছে এসেছে। বাকি জেলাগুলোর তালিকা এলে তা নিয়ে আলোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

জমির ঊর্ধ্বসীমা লঙ্ঘনকারীরা কোনো অবস্থায়ই ছাড় পাবে না বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। তিনি বলেন, জালিয়াতি করে সীমার অতিরিক্ত জমি নিজ নামে রাখা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। সারা দেশের তালিকা পাওয়ার পর বাড়তি জমি ভূমির মালিকদের কাছ থেকে ফেরত আনা হবে। এসব জমি সরকারের অনুকূলে এনে খাসজমি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কৃষিজমির সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে সময়ে সময়ে জমির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ হয়েছে। আইন অনুযায়ী ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এক ব্যক্তির অনুকূলে ৩০০ বিঘা রাখার বিধান জারি করেন। জনসংখ্যার হার বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে ১০০ বিঘা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে তৃতীয় দফা সংস্কার এনে ঊর্ধ্বসীমার পরিমাণ ৬০ বিঘা ঠিক করা হয়। বিত্তশালীদের বৈভবের ক্ষেত্র বাড়াতে কৃষিজমি কিনে একক মালিক হওয়ার লালসায় লাগাম টানতে ওই সীমা নির্ধারণ করা হয়, যা এখনো বহাল। কিন্তু কিছু মানুষ ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করে বাড়তি জমি ভোগদখল করছে। কেউ কেউ আবার ভিন্ন ভিন্ন নামে মালিকানা দেখিয়ে নিজে ভোগদখল করছে। ফলে সমাজে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে।

সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৯ আগস্ট ২০১৮

Similar Posts

error: Content is protected !!