মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
হাটহাজারীতে এক চোরকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। গত রোববার (২ সেপ্টেম্বর ২০১৮) দিবাগত রাত ২টার দিকে পৌর এলাকার আদর্শ গ্রাম থেকে চোরকে আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে ১টি গ্যাস সিলিন্ডার, চাল, ডালসহ কয়েক প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য। জনতার হাতে আটককৃত ব্যক্তি ফটিকছড়ি উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের টিলাপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র মুহররম (৪৫)। সে দীর্ঘদিন বিভিন্ন এলাকায় চুরি করত বলে স্বীকার করেন স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছে।
সরেজমিন গেলে স্থানীয় ইলিয়াছ, বাবুল প্রতিবেদককে জানান, রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিজেদের গোয়ালঘরে গরু দেখতে বের হলে তিনজন ব্যক্তি একটি ঘরের পিছনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলে চার্জ লাইটের আলো দিলে তারা দৌড় দেয়। এসময় তাদের ধাওয়া দিয়ে
উত্তর পাহাড়ের রাস্তায় ১জনকে আটক করলেও বাকি ২জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আটকের পর এলাকার লোকজন এসে পাকা রাস্তার ১নং সড়কের বটগাছ তলায় বেঁধে চোরকে গণপিটুনি দেয়।
তার স্বীকারোক্তিতে ১টি গ্যাস সিলিন্ডার, চাল, ডালসহ খাদ্যদ্রব্য উদ্ধার করে। তারপর আবারো বেধড়ক মারধর করলে স্থানীয় জনতা তার ঘর থেকে চুরি করা গরুসহ ৬টি গরু উদ্ধার করে। রাত গভীর হওয়ায় থানা পুলিশকে খবর দেয়নি কেউ। সকাল পর্যন্ত তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। সকালে থানায় কয়েকজন ব্যক্তি বিষয়টি জানালে সাড়ে নয়টায় থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ জাহেদ সঙীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় জনরোষ থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। সাথে উদ্ধার করা গ্যাস সিলিন্ডারসহ খাদ্যদ্রব্য মালামাল জব্দ করে পুলিশ। কিন্তু উদ্ধার হওয়া ৬টি গরু এলাকার খালেক নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে জিম্মায় দেয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, এলাকায় বছরকয়েক আগে গরু চুরি হলেও কিছু চক্র গরুগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে কিছু ব্যক্তিকে গরুর মালিক সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু গত বছর রহিমা বেগম নামের এক গৃহবধূর নিজের পালিত গরু চুরি হয়েছিল। থানায় ২জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক ব্যক্তির নাম দিয়ে অভিযোগ করেন। উদ্ধার হওয়া গরুর মধ্যে তার একটি গরু বলে দাবি করেন।
এর ২বছর আগে সাজু বেগম নামের এক মহিলার গরু চুরি হলে তিনিও থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু গরু উদ্ধার হয়নি। বাকি ৫ গরুর কয়েকজন ব্যক্তি মালিক সেজে তোড়জোর করতে থানায় দেখা গেছে। তাদের গরু চুরি হওয়ার পর কোন থানায় অভিযোগ করেননি। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের চুরি হওয়া গরুগুলো প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে দাবি জানান। যেন কোন চক্র এ গরুগুলো নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত কাজ করতে না পারে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ উপ-পরিদর্শক জাহেদ জানান, খবর পেয়ে আদর্শগ্রাম এলাকা থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় এক চোরকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। চুরি করা কিছু মালামাল জব্দ করা হয়। তার ঘর থেকে ৬টি গরু উদ্ধার করে স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় দেয়া হয়। তদন্ত করে প্রকৃত গরু মালিকদের গরুগুলো ফেরত দেয়া হবে।
থানার দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, আটককৃত চোরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৬ গরুর মধ্যে ২টি চোরাইকৃত গরু বলে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা হয়েছে। বাকি গরুগুলো কি তার নাকি চুরি করা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এক বছরে প্রায় ১৫টির বেশি গোয়ালঘর থেকে গরু চুরি সংগঠিত হয়েছিল। ভুক্তভোগী অনেকেই থানায় অভিযোগ করলেও তার কোন সুরাহা পায়নি বলে জানান।