মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
হাটহাজারীতে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিনের (১৩) লাশ অবশেষে উদ্ধার করেছে মডেল থানা পুলিশ। রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাটহাজারী পৌর এলাকার শাহজালাল পাড়ার সালাম ম্যানশনের ৪র্থ তলা মাদকাসক্ত মুন্নার বাসা থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। তুহিন ওই ভবনের মালিক উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নেয়ামত আলী সারাং বাড়ির আবু তৈয়বের কন্যা এবং হাটহাজারী গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী।
রোববার সন্ধ্যায় পৌর এলাকা থেকে থানা পুলিশ শাহানেওয়াজ মুন্না নামে এক বখাটে যুবককে আটক করে। ওই যুবকের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাত ৯টার দিকে পুলিশ তার (তুহিন) লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, মুন্না রাতেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্থন করে। পুলিশের হাতে আটককৃত বখাটে যুবক শাহানেওয়াজ মুন্না একই পৌরসভার চন্দ্রপুর গ্রামের ডাঃ শাহাজান সিরাজের পুত্র বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘাতক মুন্নাকে আটকের খবর পেয়ে স্থানীয় শত শত জনতা মুন্নার বিচারের দাবিতে থানা ঘেরাও করে। থানার সামনে সড়কের উপর ব্যারিকেড সৃষ্টি করলে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদমুখর জনতা রাত এগারোটা পর্যন্ত থানার প্রধান ফটকে অবস্থান করে। এ সময় ওই দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রীসাধারণ চরম দুর্ভোগে পরতে দেখা গেছে। পরে হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দীন জাহাংগীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বরাতে জানা যায়, তুহিন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নানির নিচ তলা ঘর থেকে ২য় তলায় প্রাইভেট পড়তে বের হয়। কিন্তু রাত হলেও ঘরে না আসায় তুহিনকে খুঁজতে থাকে ৬তলা বিশিষ্ট ভবনের চারদিকে হন্যে হয়ে। কিন্তু তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় মুন্নাকে সন্দেহ করে তুহিনের মামারা মুন্নাকে পুলিশে সোপর্দ করে। মুন্নার ঘরেও তল্লাশি করে ব্যর্থ হয়ে তার মা-বাবার জিম্মায় মুন্নাকে ছেড়ে দেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মুন্নার দিকে সন্দেহ করলে থানায় নিখোঁজ ডায়রি করে। পুলিশ তাকে নিয়ে তার বাসায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অস্বীকার করে। মুন্না মাদকাসক্ত বলেও স্থানীয় লোকজন জানান।
তবে মুন্না সরকারদলীয় ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। এছাড়াও সে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক সেবনে জড়িত। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে আসছে মুন্না। সে মাদব সেবন ও বিক্রেতা সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম, হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দীন জাহাংগীর, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামিম শেখ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা মডেল থানার এসআই জসিম জানান, নিখোঁজ ডায়রি করার পর থেকে তুহিনকে উদ্ধার করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছি। বেশ কয়েকবার স্কুলেও গেছি আবার ঘাতক মুন্নাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদও করেছি। আজও তদন্তে গিয়ে ফেরার পথে বাজারের মোড়ে ত্রিবেনী মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে হত্যা করে লাশ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করলে পুলিশ গিয়ে প্লাটিক মোড়ানো অবস্থায় তুহিনের গলিত লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
থানার ওসি বেলাল উদ্দীন জাহাঙীর বলেন, স্কুলছাত্রী নিখোঁজের ডায়েরি রুজু হলে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে কাজ করে। মাদক সেবনকারী মুন্না নামের এক যুবককে আটক করে তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ ৯টার দিকে তার বাসায় সালাম ম্যানশনের ৪র্থ তলা তল্লাশি করে সোফার নিচ থেকে প্লাস্টিকের বস্তাবন্দী অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করি। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘাতক একজনকে আটক করা হয়েছে তদন্ত করে আসল রহস্য বের করা হবে বলেও তিনি জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান।
রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও খুনি বখাটে মুন্নার ফাঁসির দাবিতে নিহতের সহপাঠি সহ স্থানীয়রা উপজেলার সামনে মানববন্ধন কর্মসুচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মেয়েটি নিখোঁজ হয় তার পরিবারের পক্ষে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল। তবে পরিবারের সন্দেহ তাকে অপহরণ করা হয়েছে। অবশেষে তাকে গতকাল রাতে তার বস্তাবন্দী লাশ সোফার নিচ থেকে উদ্ধার করে। তবে স্কুলছাত্রী তুহিনের বাবা-মা পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্যেশ্যে সৌদি আরব থেকে এখনো দেশে আসেননি বলে জানা যায়।