নিকলীতে যেভাবে ইসলামের আগমন হয়

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।

নিকলীতে কবে ইসলামের আগমন ঘটেছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ঐতিহাসিক কিছু প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে লোকশ্রুতি আর ঐতিহাসিক স্থাপনা উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিকদের মতে, রাসূল সাঃ-এর যুগে চারজন সাহাবী দক্ষিণ বঙ্গ হয়ে চীন পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে সমুদ্র ও নদীপথে আরব থেকে আরো ইসলাম প্রচারক আসতে থাকেন। এদের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন মসলিমগণ কালেমার প্রচার করেন। তখন থেকে বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে। বিশেষত সেই সময় ইসলাম প্রচাররকগণ ব্যবসায়ী ছিলেন।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রচার হয় ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন বিন বখতিয়ারের বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে। এর পরেই আরব, ইয়েমেন, বাগদাদ, ইরান, তুর্কি থেকে সুফি দরবেশদের আগমন ঘটে। সে সময় হাওর নদী বিধৌত ভাটি মুলুক নিকলীতেও এই সকল সুফি দরবেশগণ আগমন করেন।

প্রাক মুঘল আর মুগল আমলেই নিকলীতে সুফি দরবেশগণ ইসলাম প্রচার করেন। বিভিন্ন স্থানে মুসলিম বসতি ও স্থাপনা গড়ে ওঠে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ছয়শত বছর আগে নিকলীর দামপাড়া গ্রামে শাহ গুন জালাল ইয়ামেনী রাহঃ একজন সুফি দরবেশের আগমন ঘটে। তিনি অত্র এলাকায় ইসলাম প্রচার করেন। কথিত আছে তিনি নৌকায় চড়ে এলাকায় প্রবেশ করেন।

ইতিহাসবিদদের অনেকেই মনে করেন তিনি সিলেটের ইসলাম প্রচারক শাহ জালাল ইয়েমেনী রাহঃ-এর ৩৬০ সহচরের একজন ছিলেন। নিকলীর উত্তর দামপাড়ায় তিনি সমাধিস্থ হন। সেখানে শুধুমাত্র ৮০০শ’ হিজরী সন লেখা ফলক রয়েছে। এই তারিখ কি জন্ম, মৃত্যু নাকি আগমনের তারিখ তা উল্লেখ নেই।

মোমেনশাহীর নতুন ইতিহাস গ্রন্থে নিকলীতে এই ধর্ম প্রচারকের নাম পাওয়া যায়। এছাড়া নিকলীর দক্ষিণে গুরুই শাহী মসজিদের স্থাপনার ফলকের নিদর্শন দেখে জানা যায়, প্রাক মুঘল সময় থেকেই মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ৮৭১ সালে তৈরি করা হয়। সে সময় মুসলমানদের জন্য সুলতান বরবক শাহ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদটি নির্মাণ করেন।

নিকলী ও আশপাশের এলাকাসহ সমগ্র কিশোরগঞ্জ জেলায় এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। এর পরে আরো বিভিন্ন স্থানে মুসলিম বসতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিকলীর জারুইতলা ইউনিয়নের হাবশরদিয়া গ্রামে প্রাচীন একটি মসজিদ। এমন আরেকটি মসজিদ আছে কুর্শায়। আরেকটি প্রাচীন মসজিদ আছে কারপাশার নানশ্রী গ্রামে।

এই সকল মুসলিম স্থাপনার মাধ্যমেই নিকলীতে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার, প্রসার ও বিস্তৃতি লাভ করে।

Similar Posts

error: Content is protected !!