মহসিন সাদেক, লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।
“মহরমের চাঁদ এল ঐ কাঁদাতে ফের দুনিয়া” মহরম মাস এলেই স্মরণ হয় বেদনা ভারাক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কথা।
পৃথিবীর সকল মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ব মানবতার হৃদয়ে ভেসে ওঠে কারবালার মর্মান্তিক দৃশ্যপট। ইয়াজিদের বর্বরতা আর সীমারের নিষ্ঠুরতার ঘটনায় আজও শিউরে ওঠে মানবপ্রাণ। মর্মবেদনা প্রকাশ করে সকল মানুষ।
ইসলামের ইতিহাসে ইয়াজিদ ও সীমার রচনা করেছিলো কলঙ্কজনক অধ্যায়। যা আজো অশ্রু ঝরায় বিশ্বনবীর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও ইমাম হাসান (রাঃ) প্রেমী তথা গণতন্ত্রকামী সকল মানবতার।
মহরমের দশ তারিখ এই কষ্টের মাত্রা যেন বেড়ে যায় সহস্রাদিক গুনে। আশুরার এই দিনে কারবালার ফোরাতের প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ও তার ৭০ জনেরও বেশি অনুসারী। সেই দিন ইমাম হোসাইনের নেতৃত্বাধীন সত্য ও ন্যায়ের শক্তি দৃশ্যত পরাজিত হয়েছিল ইয়াজিদ ও উমাইয়াদের অশুভ শক্তির কাছে।
কিন্তু ইতিহাসের ঘৃণা থেকে ইয়াজিদ বা তার অনুসারীরা আজও রক্ষা পায়নি। ইমাম হোসেনের প্রতি মমত্ববোধ আর ইয়াজিদ সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশের জন্য ১০ মহরম তাজিয়া মিছিলসহ অশ্রুসিক্ত সজল নয়নে রাস্তায় নেমে আসে শিয়া সম্প্রদায়।
সরেজামিনে ঘুরে দেখা যায়, হবিগঞ্জসহ শহরতলীর আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ইমাম হোসেনের প্রতিকী তাঁবুসহ তাজিয়া মিছিল আসতে থাকে এবং তাজিয়া মিছিল শহরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ করে। এসময় মিছিলের মধ্যে পাঠিত হয় কারবালার ইতিহাস সম্বলিত বিভিন্ন গ্রন্ত্র থেকে সংগ্রহকৃত জারী, কালাম, মার্সিয়া, গজল ও নিষ্ঠুর ইয়াজিদ ও পাষণ্ড সিমারের হাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের লোমহর্ষক করুণ কাহিনী।
এসময় মিছিল থেকে কান্না কণ্ঠে “হায় হোসেন হায় হোসেন” মাতমে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আবেগ আর কান্নায় বেহুঁশ হয়ে পড়েন অনেকেই। ইমাম হাসান, হোসেনের প্রতি ভালবাসার এ এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত। হৃদয়বিদায়ক এই দৃশ্য আবলোকন করতে শহরের রাস্তার উভয় দিকে অবস্থান নেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর লক্ষাধিক মানুষ।
এসময় তাজিয়া মিছিলে সু-শৃংখলতা বজায় রাখতে এবং যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার যাতে সৃষ্টি না হয় সেই জন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখযোগ্য।