আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হলসংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হলভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ডেটাবেইস প্রস্তুত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেটাবেইস উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই ডেটাবেইসকে ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য খসড়া ভোটার তালিকা’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ডেটাবেইস উদ্বোধনের সময় উপাচার্য বলেন, এটিকে ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা বলা কঠিন, বলা যায় হলভিত্তিক শিক্ষার্থী তালিকা। ডাকসু নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হলে ডাকসুর সংবিধানের আলোকে এখান থেকে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
হলভিত্তিক তালিকা দেখুন এই লিংকে
এর আগে ৩০ মার্চকে ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া যে গতিতে চলছে, তাতে করে মার্চে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ধাপে ধাপে কাজ চলছে। তাই এটি নিয়ে বাড়তি কথা বলার সুযোগ নেই।
প্রকাশিত তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের সঙ্গে সংযুক্ত ও আবাসিক মিলিয়ে মোট ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০৯ জন নারী শিক্ষার্থী ও ২৩ হাজার ৯৮৪ জন পুরুষ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে এই তালিকা দেখা যাবে।
ডেটাবেইস উদ্বোধনের সময় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা শিক্ষার্থীদের হলভিত্তিক একটি ডেটাবেইস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু প্রথমবার, এতে ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সেগুলো সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। হল অফিসগুলোয় তালিকার হার্ড কপি সংরক্ষিত থাকবে। সংশোধন, পরিমার্জন ও বিয়োজনের জন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষের অফিসে লিখিতভাবে জানাতে হবে।’
উপাচার্য জানান, এই ডেটাবেইসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের সুবিধা হবে। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিনতে পারবেন। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে।
ডেটাবেইস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
ডাকসু ও হলসংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের প্রতিক্রিয়ায় তালিকার স্বচ্ছতা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিয়ে কথা বলেছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যারা পছন্দের প্রার্থী, সেসব প্রার্থী বাছাই করার চেষ্টা করছি। প্রকাশিত ভোটার তালিকার দিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের তরফ থেকে সুপারিশ দিয়েছি যে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই যেন ডাকসুর ভোটার হয়। ভোটার তালিকা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেল কি না।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ডাকসুর ভোটার তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে আমরা অবহিত নই। তালিকা যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে কতটুকু সঠিকভাবে এটি করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন করার আগে নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা কারা ভোটার হবে, এগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল। কোনো সংগঠনের সঙ্গে কথা না বলেই ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলো। ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশও তো নেই। আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়েছে—এই বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারা ভোটার হবেন, তা আলোচনা না করেই তালিকা হয়ে গেল, এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, ‘২৭-২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে—এর জন্য ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধুবাদ জানাতে চাই। এটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া হওয়ায় প্রথম পদক্ষেপটি হওয়া উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা এবং পরবর্তী সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। কিন্তু প্রশাসন সহাবস্থানের বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। তবু প্রশাসন নির্বাচনপ্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে, ছাত্র ইউনিয়ন একে সাধুবাদ জানাচ্ছে।’
সূত্র : প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০১৮