আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আবার ক্ষমতায় এলে সব বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সামনে নির্বাচনে আবার যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে বাকি বিভাগগুলোতেও করে দেব।
বুধবার (৩১ অক্টোবর ২০১৮) সকালে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন এবং আরও কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সব সরকারি হাসপাতালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে সেবা দেওয়াটা আপনাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ, এগুলোর নির্মাণে সরকারকে অনেক কষ্ট করে বাজেট বরাদ্দ করতে হয়েছে। ‘স্বাস্হ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা আশা করব, আপনারা চিকিৎসাসেবাটাকে আপনাদের কেবল পেশা হিসেবে নয়, মহান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করবেন’—যোগ করেন তিনি।
প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন চিকিৎসাসেবা দেওয়া থেকে শুরু করে গবেষণা, ক্লাস নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের রোগের ধরন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, রোগনির্ণয় এবং এর সমাধানে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, নাক-কান–গলা ইনস্টিটিউট, ক্যানসার ইনস্টিটিউট, বেগম ফজিলাতুন্নেছা নেতা কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের তিন মেয়াদে বিশেষায়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীরা স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারছেন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল রোগের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহাখালীতে ২ একর জমির ওপর ১০ তলা মূল হাসপাতাল ভবনসহ আরও চারটি পাঁচতলা ভবন নিয়ে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। এখানে ইমার্জেন্সি এন্ডোসকপিক ইন্টারভেনশন, ইমার্জেন্সি সার্জিক্যাল কেয়ার ও ১২ বেডের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডসহ গ্যাস্ট্রো ইনটেসটাইনাল ইমার্জেন্সি সেবার সুবিধা রয়েছে। বহির্বিভাগে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটেইনাল রোগগুলোর মেডিকেল ও সার্জিক্যাল কনসালটেশন–ব্যবস্থাও রয়েছে। তা ছাড়া এই হাসপাতালে রয়েছে চারটি অপারেশন থিয়েটার, আট বেডের আইসিইউ, ১২ বেডের এইচডিইউ, ১২টি ওয়ার্ড এবং ৩০টি কেবিন। পাঁচতলা ভবনগুলো পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হোস্টেল, ডক্টরস ডরমিটরি, নার্সেস হোস্টেল ও ইমার্জেন্সি স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
মানুষ যেন স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে জন্য হাসপাতাল নির্মাণে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তারা যাতে স্বল্প শুল্কে হাসপাতালের বিভিন্ন সামগ্রী এবং যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি ৭৫–পরবর্তী প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, ‘আগে বিদেশিরা কোনো বাঙালিকে দেখলে বলত খুনি। এখন আর তা বলে না। বাংলাদেশের হারানো গৌরব আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান তাঁকে প্রশ্ন করে জানতে চান, কীভাবে বাংলাদেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, ম্যাজিকটা কী? তিনি বলেন, উত্তরে তাঁর একটাই কথা, ম্যাজিক কিছুই না, সবটাই হচ্ছে আন্তরিকতা এবং কর্মনিষ্ঠা। মানুষের জন্য কিছু করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের উদ্বোধন, মহাখালীর বিএমআরসি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শেরবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজ, কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সম্প্রসারণকাজ, মুগদার ৫০০ বেড হাসপাতাল সম্প্রসারণ, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ভবন, অ্যাজমা সেন্টার সম্প্রসারণকাজের উদ্বোধন করেন।
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে, সেগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে এবং এগুলোর কাজ শেষ হলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তিটা আরও মজবুত হবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটা অনুরোধ করব, এই ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল—যে প্রতিষ্ঠানগুলোই আমরা তৈরি করি না কেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সুন্দরভাবে চলে, ভালোভাবে চলে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম শিশির এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সূত্র : প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০১৮