গ্রেফতার হলে করণীয় বা অধিকার

কেউ যদি গ্রেফতার বা আটক হন, তাহলে তার কিছু অধিকার আমাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত রয়েছে। তাই গ্রেফতারের আগে বা পরে তার কোন কোন আইনে কি কি অধিকার রয়েছে, তা আমাদের জানা দরকার।
যে সকল আইনসমূহে আমাদের সেই অধিকারগুলো রয়েছে তা নিম্নরূপ :
• গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
• ফৌজদারি কার্যবিধি – ১৮৯৮
• বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন – ১৯৪৩, ইত্যাদি।

কিভাবে গ্রেফতার করতে হয়?
কথা বা কাজের দ্বারা হেফাজতে আত্মসমর্পণ না করলে পুলিশ অফিসার অথবা গ্রেফতারকারী অন্য কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার করার সময় যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার দেহ স্পর্শ বা আটক করবেন।

জোর বা বলপূর্বক গ্রেফতারের প্রতিরোধ করবেন কি?
না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বলপূর্বক তাকে গ্রেফতারের চেষ্টায় বাধা দেয় অথবা গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করেন, তা হলে পুলিশ অফিসার অথবা অন্য ব্যক্তির গ্রেফতার কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন।

মহিলাদের দেহ তল্লাশির পদ্ধতি
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২ ধারায় মহিলাদের তল্লাশির পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো স্ত্রীলোকের দেহ তল্লাশি করার প্রয়োজন হলে শালীনতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে তা অন্য একজন স্ত্রীলোক দিয়ে করাতে হবে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকারসমূহ
বাংলাদেশের সংবিধনের ৩৩(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে :
* গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত এর অতিরিক্ত সময় আটক রাখা যাবে না।
* সংবিধানের ৩৩(১)অনুচ্ছেদে : গ্রেফতারের কারণ জানানো, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের সুযোগ দান ও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
* সংবিধানের ৩৩(৪) অনুচ্ছেদে : কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
* অভিযোগ সংক্রান্ত সকল কাগজের নকল পাওয়া।
* পুলিশ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়গণকে গ্রেফতারের কারণ ও স্থান জানাবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করতে পারে। তবে তা অবশ্যই আমলযোগ্য অপরাধ হতে হবে।
আমলযোগ্য অপরাধ কী? ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪(চ) অনুযায়ী এটি সেই সমস্ত অপরাধ যার জন্য পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করতে পারে। যেমন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, অপহরণ ইত্যাদি।

যে সকল কারণে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে
* কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা অপরাধের সাথে জড়িত বলে যুক্তিসঙ্গত বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে।
* আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত তার কাছে ঘর ভাঙ্গার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে।
* সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে।
* চোরাইকৃত কোনো মালামাল বহন বা তার এ সম্পর্কে কোনো অপরাধ রয়েছে বলে যুক্তি সন্দেহ কারন রয়েছে।
* কোনো পুলিশের কাজে বাধা দানকারী বা আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন বা পালানোর চেষ্টা।
* বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী থেকে পলায়নকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
* বাংলাদেশের বাইরে কোনো অপরাধ করেছেন, যা বাংলাদেশের আইনেও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত।
* যাকে গ্রেফতারের জন্য অন্য কোনো পুলিশের কাছ থেকে অনুরোধ পাওয়া গেছে।
* নাম ও বাসস্থান জানাতে অস্বীকৃতি জানালে।
* কোনো ভবঘুরে ব্যক্তি বা অভ্যাসগত চোর বা ডাকাত হলে।

jamiul_haque_faisal

লেখকঃ জামিউল হক ফয়সাল এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
Mail : adv.jhfaisal@gmail.com
কৃতজ্ঞতা: Bangladesh Code, BLAST, Law and Practice of CrPC-Zahirul Haque

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!