মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
হাটহাজারীতে নিজের বাসগৃহ থেকে অনৈতিক সম্পর্কে এক মহিলার সাথে অনৈতিক অন্তরঙ্গ অবস্থায় নিরাপদ সড়ক চাই-এর হাটহাজারী শাখার আহ্বায়ক কে এম ইউসুফকে তার স্ত্রী আটক করেছে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায়। শনিবার (৩ নভেম্বর ২০১৮) সকাল ৭টায় পৌর এলাকার আদর্শগ্রামের মরহুম শফিক টেইলার্সের বাড়িতে এ ঘটনা সংগঠিত হয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশের এসআই উৎসুক জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় হেফাজতে নেয়া হয়। আটককৃতর স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রুজু করেছেন। যার নং ৪১৮৭। এসময় স্থানীয় জনতা ভণ্ড, ভুয়া সাংবাদিক বলে স্লোগান দেয় এবং তার কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বরাত জানা যায়, শনিবার সকালে কে এম ইউসুফের স্ত্রী এলাকাবাসীকে জানালে জনতা তাকেসহ ওই নারীকে আটক করে। কিন্তু আটককৃত ওই মহিলা তার সঠিক তথ্য এলাকাবাসীকে না দিলে তারা থানায় বিষয়টি জানান। আটককৃত মহিলার সাথে একটি ৫ বছরের বাচ্চাও ছিল। মহিলাটি এলাকার জনগণকে জানান আগের স্বামীর সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ২-৩মাস আগে। গত দেড় মাস আগে কে এম ইউসুফের সাথে তার বিবাহ হয় একজন হুজুরের মাধ্যমে। তবে কাগজে-কলমে বা কাবিননামাসহ কোনো কিছু হয়নি। কোনো সাক্ষী নেই তাদের বিবাহে।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন এ কেমন বিয়ে? যার কোনো সাক্ষী বা বৈধতার কিছু নেই! উত্তেজিত জনতা বলছে, নিজের স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে রেখে পরের স্ত্রীর সাথে রাতযাপন করে এলাকাকে পাপের রাজ্যে পরিণত করেছে। আমরা ভণ্ড হুজুরের কঠোর শাস্তি চাই।
আটককৃত কে এম ইউসুফের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, শুক্রবার সকালে আমার ছেলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে আমি ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যাই চিকিৎসার জন্য। কিন্তু রাতে একটি বাচ্চাসহ বাড়িতে কেউ না থাকায় ওই মহিলাটিকে নিয়ে রাত কাটায়। সন্ধ্যায় আমার দেবরকে বলেছে সে (স্বামী) তার এক বন্ধুর স্ত্রীসহ বাড়িতে আসবে। সে যখন মহিলকে বাচ্চাসহ দেখল কিন্তু তার বন্ধু নেই তখন আমার দেবর আমাকে রাতে কল দিলে সকাল ৬টার দিকে বসতঘরে এসে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিসহ ঘর থেকে আটক করি।
এসময় আমার স্বামী আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে সংসার করবে বলেও হুমকি দেয়। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সে আমাকে বিয়ে করার আগেও এক মেয়ের সাথে অনৈতিক মেলামেশা অবস্থায় জনতার কাছে ধরা খেয়ে রঙ্গিপাড়া এলাকা থেকে এক মেয়েকে বিবাহ করেছে। তার ঘরেও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। বর্তমানে আমাকে বিয়ের কয়েক বছর পরেও আমার এলাকায়ও নারী সংগঠিত অপকর্মে ধরা খেয়ে শালিসী বৈঠকে এমন করবে না মর্মে মুচলেখা দিয়েছে।
তার এই কুকর্মের জন্য কঠোর শাস্তি দাবি করেন স্ত্রী জেসমীন আক্তার। সে ভুয়া সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নারীর সাথে অবৈধ মেলামেশা করে। তার প্রতিবাদ করলে সে আমাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করে। বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্যও মারধর করলে আমার দুই সন্তানদের দিকে তাকিয়ে তাকে টাকা এনে দেই। সে নিয়মিত আমাকে ভরণ পোষণ দেয় না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কে এম ইউসুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই মেয়েটিকে বিবাহ করেছি দেড়মাস আগে। হাটহাজারী মাদরাসার এক শিক্ষক সেই বিবাহ পড়ান। কিন্তু তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউসুফ। কোনো কাবিননামাসহ বিবাহের সাক্ষ-প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিবাহ হয়েছে মৌখিক। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে রাতযাপন কতটুকু যৌক্তিক? তাছাড়া এ বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তা এড়িয়ে যান তিনি। আটককৃত কে এম ইউসুফ নিরাপদ সড়ক চাই-এর হাটহাজারী শাখার সমন্বয়ক। এছাড়া তিনি হাটহাজারী পৌরসভার মিরেরখীল গ্রামের মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও হাটহাজারী সমাচারের সম্পাদকের দায়িত্বে পালন করেন। কেএম ইউসুফ এ পর্যন্ত তিন বিয়ে করেছেন। প্রথম সংসারে এক কন্যা ও দ্বিতীয় সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
কেএম ইউসুফ (৪০) পৌর এলাকার আদর্শগ্রামের মৃত শফিকের পুত্র ও আটককৃত মহিলা চারিয়া এলাকার সুলতান কোরবানের বাড়ির নুরুর কন্যা সীমা আক্তার (২২)। আটককৃত শীমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দেড়মাস আগে বিয়ে করেছি। আমি তার সাথে সংসার করব।
হাটহাজারী মডেল থানার ওসি বেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, তদন্ত করে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।