নিকলীর প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল ছাত্রনেতা কারার শাহরিয়ার তুলিপ। এ প্রজন্মের অনেকের আইডল। সম্প্রতি আমাদের নিকলী.কম মুখোমুখি হয়েছিল উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কারার শাহরিয়ার তুলিপের। পাঠকদের উদ্দেশে আলাপচারিতার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহছান ও আবদুল্লাহ আল মহসিন
আমাদের নিকলী ডটকম। নিকলীভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। যার অন্যতম হলো অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য।
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : আমাদের নিকলী ডটকম নিকলীতে একটি নতুনত্বের সৃষ্টি করেছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া প্রায় সবাই এখন অনলাইন কার্যক্রমের সাথে পরিচিত। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে। এ প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক এই অনলাইন সংবাদ মাধ্যমটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি। এ অনলাইন কুইজের মাধ্যমে এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় অনেক বিষয়ে নতুনভাবে জানতে পারবে। আমাদের নিকলী ডটকম-এ আঞ্চলিক সুন্দর ছবি পোস্ট, বিশেষ দর্শনীয় স্পটগুলো নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশে নিকলী সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুকদের কাজ সহজ করে দিচ্ছে।
নিকলীতে ছাত্রনেতৃত্বের পরিসর তেমন বিস্তৃত নয়। এর মাঝেও আপনি শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশকে একটিভ রাখছেন। কিভাবে?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র সম্প্রতি পরিবর্তন করে বয়সসীমা বেধে দেয়া হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিক কারণেই ছাত্রনেতৃত্ব এখন প্রকৃত ছাত্রদের হাতেই। স্থানীয় ফাদার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং আদর্শিক রাজনীতি করার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। তার ওপর নিকলী-বাজিতপুরের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আমার প্রাণপ্রিয় নেতা আলহাজ আফজাল হোসেন, আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলামের বর্ণাঢ্য ছাত্রনেতৃত্ব আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। যদিও ছাত্ররাজনীতি স্কুল-কলেজভিত্তিক, তবু সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো কমিটি আমরা করছি না।
নেতৃত্বের অবস্থান থেকে বলবেন, নিকলীর সার্বিক উন্নয়নের চিত্রপট সম্পর্কে।
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর নিকলীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নিকলী-বাজিতপুরের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আফজাল হোসেন শিক্ষাক্ষেত্রসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করে চলছেন। অত্র এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির সবখানেই সৌরবিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করেছেন। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই তলা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। মাননীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে নিকলীর একমাত্র কলেজকে ডিগ্রিতে রূপান্তর করেছেন। সদরের আভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি নিকলী থেকে দামপাড়া হয়ে সিংপুর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক এবং সদরের সাথে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ হয়েছে।
আপনি ছাত্রনেতা, বলছেন স্কুল-কলেজে ছাত্রসংগঠনের কমিটি গঠন করছেন না। ছাত্ররাজনীতি করা মানেই দাঙ্গা-হাঙ্গামা নয়, এরকম চর্চার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিডারশিপ গড়ে উঠতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি জোটবদ্ধ থাকলে যে কোনো ফোরামে আলোচনার পথ উন্মোচিত হয়।
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আগের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ছাত্রসংগঠনের সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনার ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতো। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এমন পরিবেশ থেকে মুক্ত রাখার জন্য নিকলীর বাইরে কোনো কলেজে ভর্তি করাতো। রাজনৈতিক বলয়মুক্ত রাখায় ইদানিং লক্ষণীয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে পড়াশোনায় বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫০০। এলাকার সচেতন নাগরিক হিসেবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। এই উপলব্ধি থেকেই এ ধরনের কার্যক্রম আমরা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নিকলীর স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : নিকলী একটি অবহেলিত জনপদ ছিল। অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে শিক্ষার হার অনেক কম ছিল। তা সত্ত্বেও নিকলীর অনেক কৃতি শিক্ষার্থী রয়েছেন। নিকলী গোরাচাঁদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন এমন অনেক গুণীজন রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক সচিব কারার মাহমুদুল হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুর রহিম, বিচারপতি আমির হোসেন সাহেবসহ আরো অনেকেই। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে শিক্ষার মান আরো ভালো হবে।
নিকলী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের বিজ্ঞানাগার নেই। এ বিষয়ে ছাত্রনেতা হিসেবে কোনো দাবি জানিয়েছেন?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : নিকলী জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন দু’জন প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ স্যার ও এম নুরুল্লাহ স্যারের সময় বিজ্ঞান বিষয়ে বেশ জোর দেয়া হয়েছিল। উনাদের অবর্তমানে মাঝে কিছুদিন যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাবে ফলাফল নিম্নমুখী ছিল। সম্প্রতি স্কুল পরিচালনায় নতুন প্রধান শিক্ষক কারার আবদুর রশিদ স্যার দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করি আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুদিন ফিরবে। সাইন্স ল্যাবগুলোতে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যোগ করতে হবে; এবং দক্ষ-অভিজ্ঞ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সম্মিলন ঘটাতে হবে।
জানা মতে, দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে আপনার একটা পজিটিভ ইমেজ আছে। কিভাবে মেইনটেইন করেন?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : ছোটকাল থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই আমি ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হই। তখন দেখতাম, আমার শ্রদ্ধেয় দাদা কারার গিয়াসউদ্দিন সাহেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিকলী উপজেলার সংগঠন পরিচালনা করেন। আমার চাচা বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি। আমার বাবা কারার বোরহান উদ্দিন দুই-দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনিও লোকাল পলিটিক্সের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আফজাল হোসেনের নির্দেশনাও রয়েছে দলমত বিভাজন না করতে। সব মতাদর্শের লোকদের সাথে সহাবস্থানের যে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ, এটাই আমাকে এমন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে সারাদেশের বিকশিত ছাত্রনেতৃত্বের মতো নিকলীতেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। দীর্ঘ সময় শূন্য থাকার পর বর্তমান সময়ে আপনাকে পাওয়া গেল ছাত্রদের হাল ধরার জন্য। এমন শূন্যতা সৃষ্টির কারণ কি?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : নব্বইয়ের দশকে প্রকৃতপক্ষে একটা প্রেক্ষাপট ছিল ছাত্রনেতৃত্ব তৈরি হওয়ার। তখন সারাদেশব্যাপী এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিকলীতেও ছাত্রলীগ-ছাত্রদল একসাথে কাজ করেছে। তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা অনেক বেশি ছিল। এরপর যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের আন্তরিকতা, ও দক্ষতার অভাব ছিল বলেই সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা দেখা যায়নি। এখন যারা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা আছেন, তারাও ছাত্রসংগঠনকে সক্রিয় রাখতে যথেষ্ট উদার।
একজন নেতার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো পরবর্তী নেতৃত্ব তৈরি করা। নতুনদের মাঝে লিডারশিপ গড়ে তোলার জন্য কি কি করছেন?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তৃণমূল পর্যায়ের সবার সাথে কাউন্সেলিং করছি। পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ইউনিটে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি, এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ছাত্রনেতৃত্ব সব সময় সক্রিয় থাকবে; এবং সংগঠন পাবে দক্ষ ছাত্রনেতা। আমি একটি গণতান্ত্রিক ভিত গড়ে দিয়েছি। আমার ধারণা, যারা পরবর্তীতে নেতৃত্বে আসবেন তারা আমার চেয়েও ভালোভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
ছাত্ররাজনীতি শেষের দিকে। রাজনীতি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এ পদ থেকে সরে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকতে চাই, পদ কোনো ফ্যাক্টর হতে পারে না। এ আদর্শ আমার মাঝে লালন করি।
এক সময় ফুটবলে নিকলীর সুনাম ছিল। ইদানীং সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে নিকলীর সাঁতারুরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফুটবলের ঐতিহ্য প্রায় বিলীন। সাঁতারে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে আমাদের করণীয়।
উত্তর : সাঁতার নিকলীর একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। সারাদেশে নিকলীর নৌকাবাইচ ও সাঁতার পরিচিত। স্থানীয় সাঁতারুরা পুকুরেই ক্ষুদ্র পরিসরে অনুশীলন করে থাকে। প্রায় সব পুকুরেই মাছের চাষ হচ্ছে। মাছের যে খাবারগুলো দেয়া হয় তা স্বাস্থ্যহানিকর। বিধায় বেশি সময় অনুশীলন সম্ভব হয় না। উপজেলা চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম উপজেলা পরিষদের পুকুরটি সাঁতারুদের সুবিধার্থে লিজ দেয়া বন্ধ রেখেছেন। মাননীয় সংসদ সদস্য, আমার নেতা আলহাজ আফজাল হোসেন পুকুরটির দুই পাশে ডাইভ ও রিটার্ন করার জন্য দু’টি ওয়াল তৈরির বরাদ্দ দিয়েছেন। এতে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও সাঁতারের যথাযথ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আমাদের নিকলী ডটকম’কে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কারার শাহরিয়ার তুলিপ : আঞ্চলিক এমন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পরিচালনার জন্য আমাদের নিকলী ডটকম’কেও ধন্যবাদ। এই অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ভবিষ্যতে আরো সুন্দর ও গঠনমূলক অনেক অবদান সমাজে রাখবে বলে আমার আশাবাদ।
ছবি সংগ্রহ : কারার শাহরিয়ার তুলিপের এফবি টাইমলাইন