আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
দ্বিতীয় দফায় বুধবার (৭ নভেম্বর ২০১৮) সরকারের সাথে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের নতুন তেমন কিছুই জানাতে পারেনি দু-পক্ষ। গণভবনে সংলাপের বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সাথে সাথেই কিছু বলতে চাননি। পরে নিজেদের মধ্যে কথা বলার পর যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানেও বেশ সতর্ক হয়ে কথা বলেছেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের তাদের মূল দাবিগুলোতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দু-একজন বিরোধী নেতা বলেন, তারা এখন আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করে দাবি আদায় করবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড: কামাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে এগুলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে। তবে কতটা গুরুত্বের সাথে এসব হুমকি তারা দিচ্ছেন, তা বোঝা যায়নি। এটা কম-বেশি পরিষ্কার যে, সংলাপে বিরোধীদের সাত-দফার মূল দাবিগুলো-সরাসরি নাকচ হয়ে গেছে।
সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের দাবি পূরণ নিয়ে একটি ‘রূপরেখা’ সরকারের কাছে তুলে ধরেছিলেন।
২৮ জানুয়ারিতে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন তারা। একইসাথে, পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আদলে একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং জনাদশেক উপদেষ্টা নিয়োগ করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
জানা গেছে, এসব প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নাকচ করে দেন। এমনকি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে না পারলেও আইনের পথেই জামিন দেয়ার প্রস্তাবেও সরকার কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার করে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার দাবিও নাকচ হয়ে যায়।
মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন বিরোধী নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা গ্রহণ করেছে সরকার। আশ্বাস দেয়া হয়েছে, তদন্ত করে দেখা হবে। বিদেশী নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়ে সরকার আপত্তি করবে না বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সাত-দফা দাবির প্রাপ্তি এটুকুই।
সতর্ক বিরোধীরা
প্রশ্ন হচ্ছে এখন বিরোধীরা কি করবেন? আলোচনা ছেড়ে বড় ধরনের আন্দোলনের পথ ধরবেন? নির্বাচন বর্জন করবেন? এসব প্রশ্নে খুব সতর্ক উত্তর দিয়েছেন বিরোধী নেতারা।
আলোচনা কি ব্যর্থ হয়েছে- এ ধরনের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর দিতে চাননি তারা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা সরকারের সাথে আরও আলোচনা করতে চান এবং আশা করেন সরকার রাজী হবে।
বিরোধীদের কথাবার্তায় ইঙ্গিত স্পষ্ট তারা এখনই চূড়ান্ত কোনো পথ নিতে চাইছেন না। সরকারের সাথে সংঘাতের কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এমনকি শুক্রবার রাজশাহীতে তাদের জনসভার আগে ‘রোডমার্চে’র এক কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
সংলাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
বিরোধীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবারই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হচ্ছে। এরপর শনিবার রাজশাহীর জনসভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কি বলেন, তা থেকেই হয়তো ইঙ্গিত মিলবে নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের অবস্থান কী হতে পারে। তবে সেখানে নির্বাচন বর্জনের মত কোনো চমক থাকবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী পরে সংবাদ সম্মেলনটি করেন কিনা এবং করলে সেখানে তিনি কি বলেন, সেটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র : বিবিসি বাংলা, ৭ নভেম্বর ২০১৮