বিএনপির নির্বাচন সামলাবেন জুবায়দা রহমান?

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার পরে আরও এক মহিলা রাজনীতিকের কি উত্থান হতে চলেছে বাংলাদেশে? কর্মীদের চাঙ্গা করে নতুন উদ্যমে ভোটের ময়দানে নামাতে এবং দলে জিয়া পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারেক রহমানের স্ত্রী জুবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনার বিষয়টি এক রকম চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপি। জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি— কারাবন্দি খালেদা এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। তারেকও সম্মত। পেশাদার চিকিৎসক বছর চল্লিশের জুবায়দাও ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, রাজনীতিতে নামতে তিনি তৈরি।

এর পরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূর অভিষেক কেবল সময়ের অপেক্ষা। কেন জুবায়দাকে নেতৃত্বে আনার কথা ভাবছে বিএনপি?

এর আগে ২০১৪-র নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। হাজার টালবাহানার পরে এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা রোববারই করেছে বিএনপি। কিন্তু দেরিতে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তারা। পিছিয়ে ভাবমূর্তিতেও। দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া, দু’জনেই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে, তাঁর পুত্র অস্থায়ী চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দেশে মামলায় ফেরারী হয়ে লন্ডনে। একটি মামলায় হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে তাঁদের প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, দলের নেতৃত্বে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবার থেকে জুবায়দার মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে দলের মাথায় আনলে ভোটারদের কাছে যেমন বার্তা দেয়া যাবে, দলের কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন বিএনপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব।

তারেক-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়— গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া ভারতের কংগ্রেস যেমন চলতে পারে না, মাথায় শেখ পরিবারের কাউকে ছাড়া আওয়ামীলীগকে যেমন ভাবা যায় না, জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াও বিএনপি টিকতে পারে না। দলের নেতৃত্বে তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো গ্রহণযোগ্য মুখ এনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীরাও’। তা মেনেই জুবায়দাকে রাজনীতিতে আনার কথা ভাবা হয়েছে। সিলেট, ফেনী এবং বগুড়ার একাধিক আসনে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম রাখা হচ্ছে।

বিএনপি-র শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বা বগুড়া থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ দিয়ে জুবায়দাকে আপাতত দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনী কাজে সমন্বয়ের দায়িত্বও তাঁর হাতে ছাড়ার কথা ভাবা হয়েছে। আপাতত অস্থায়ী চেয়ারম্যান তারেকের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি দল চালাবেন।

পরিবার সূত্রের খবর, জুবায়দার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সেনা-সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানি জুবায়দার কাকা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জুবায়দা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন।

তবে মনোনয়নপত্রে সই করা হয়তো এবারও জুবায়দার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর পাসপোর্ট আপাতত লন্ডনে বাংলাদেশি হাইকমিশনের হাতে থাকায় ঢাকা ফিরতে সময় লাগবে। সেজন্য প্রচারের মঞ্চ থেকে তাঁর ভিডিও-বক্তৃতা প্রচারের কথাও ভেবে রেখেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।

প্রশ্ন হলো, পোড় খাওয়া রাজনীতিক শেখ হাসিনার সঙ্গে লড়াইয়ে কতটা ছাপ ফেলতে পারবেন জিয়া পরিবারের এই নবাগত রাজনীতিক?

জুবায়দা রহমান

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ নভেম্বর ২০১৮

Similar Posts

error: Content is protected !!