আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
প্রথমবারের মতো বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছে বাম ও প্রগতিশীল ঘরানার চারটি রাজনৈতিক দল। আর জোটবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে অংশ নিচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। ইতোমধ্যে অন্যতম প্রধান শরিক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থিতা করার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। আসন বণ্টনের পাশাপাশি নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে ছয় সদস্যের একটি ইশতেহার বিষয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির বৈঠক না হলেও ভোটারদের আগ্রহ তৈরি এবং ফ্রন্টের প্রতীক বিজয়ী করতে ইশতেহার তৈরির প্রাথমিক কাজগুলো শুরু হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে সাংবিধানিক সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, বেকারত্ব কমানো, উন্নয়নের সুষম বণ্টন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত, জাতীয় নেতাদের মর্যাদা নিশ্চিত, মেগা প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখা, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন, কোটা সংস্কার, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সরকারি চিকিৎসাসুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশতেহার কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “ইশতেহারের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। সব শরিকের প্রস্তাব সমন্বয় করে নেতাদের হাতে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত অনেক কিছুকেই বিবেচনায় নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত কিছু হতে কিছুটা সময় লাগবে।”
কমিটির আরেক সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কোনও বৈঠক হয়নি। মুখোমুখি কিছু আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ দফাকে সামনে রেখেই কাজ করছি। আরও দুয়েকদিন সময় লাগবে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ছয়জনের ইশতেহার কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেনি। গত ১৩ নভেম্বর ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ছয়জনের একটি কমিটি হয়। সে কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, বিএনপি থেকে মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ.ও.ম. শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ রিপোর্ট লেখার সময় (শনিবার রাত) পর্যন্ত কোনও বৈঠক করেনি ইশতেহার কমিটি। যদিও জাফরুল্লাহ চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে কৃষক ও কৃষিস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে পাঁচটি প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এ প্রস্তাবে আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইশতেহার কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতেহার হচ্ছে দুইভাবে। একটি হবে বিস্তারিত, আরেকটি এক বা দুই পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত ইশতেহারটিকেই পোস্টার, লিফলেট করে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি ইতোমধ্যেই ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছে। এই ভিশনকে সামনে রেখেই ইশতেহার প্রণয়নে বসবে কমিটি। এছাড়া, আরও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে মানুষের সামনে একটি দায়িত্বশীল ও তরুণদের আগ্রহী করে তোলে, এমন ইশতেহারই ফ্রন্টের লক্ষ্য বলে জানান এসব নেতা।
কমিটির সূত্র বলছে, নির্বাচনি ইশতেহারে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত ‘ভিশন-২০৩০’কে সামনে রাখা হবে। এই ভিশন থেকেই নেওয়া হবে ইশতেহারের একটি বড় অংশ। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সমন্বয় করতে সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে ইশতেহারে। এছাড়া ১৩ অক্টোবর আত্মপ্রকাশের দিনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ১১ টি লক্ষ্য স্থির করেছে, ইশতেহারে তার একটি প্রতিফলন দেখা যাবে।
কমিটির একজন সদস্যের ভাষ্য, মূলত ১১ টি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ইশতেহারের মৌলিক বক্তব্য তৈরি হবে। ইতোমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রত্যেকেই কাজ করছে, দুই-দিনের মধ্যেই ইশতেহার কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে রবিবার বিকালে কমিটির অন্যতম সদস্য সাংবাদিক মাহফজুউল্লাহ রচিত ‘বেগম খালেদা জিয়া : হার লাইফ, হার স্টোরি’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান থাকায় কাল বৈঠকের সম্ভাবনা কম। আগামী সোমবার-মঙ্গলবার নাগাদ ইশতেহার কমিটির বৈঠক হবে, এমন তথ্য জানিয়েছেন কমিটির একজন সদস্য।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচনি ইশতেহারে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। ঐক্যফ্রন্ট যে ১১টি লক্ষ্য দিয়েছে, এই লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখেই ইশতেহার তৈরি হবে। আমাদের কমিটি কাজ করছে।’
২০১৭ সালের ১০ মে গুলশানের দ্য ওয়েস্টিনে ‘ভিশন-২০৩০’-এ ‘গণতন্ত্র’কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবনার প্রথমেই দেশের মালিকানা দেশের জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এর একটি বাস্তব চিত্র ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কণ্ঠে প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন তার প্রত্যেকটি বক্তব্যেই জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সিলেটে গত ২৪ অক্টোবর ফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। দেশের মানুষ দেশের মালিকানা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে জনগণের ঐক্য অপরিহার্য। সবাইকে এসে বলতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সহজ নয়। শক্তভাবে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মালিকানা মানুষ ফিরে পাবে। আমরা ক্ষমতায় আসবো। জনগণকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করবো। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনা হবে।’
‘ভিশন-২০৩০’র প্রস্তাবে মত-প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়। বিশেষ জোর দিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব ছিল, সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়টি। তার ভাষ্য ছিলো, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রস্তাবও ছিলো তার। ‘ভিশন-২০৩০’ প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য ছিল, বাংলাদেশ একটি রেইনবো জাতিতে পরিণত করার চেষ্টা করবে বিএনপি। আর এই বিষয়টি সরাসরি বা ঘুরিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে।
এছাড়া ‘ভিশন-২০৩০’তে উপস্থাপিত সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, নিম্ন আদালতের স্বাধীনতা বাড়ানো, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি, বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এই বিষয়গুলোকে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সংক্ষিপ্তকারে রাখা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য জানান, মূলত সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে ‘ভিশন-২০৩০’-এর একটি প্রভাব তো থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। যে জাতীয় ঐক্যের ডাক খালেদা জিয়া দুই বছর আগে দিয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফলে, কারাগারে থাকলেও তার অভিমতকে সামনে রেখেই ইশতেহার তৈরি হবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার।
ইশতেহারের কাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীলের ভাষ্য, সম্ভাব্য তিনটি স্লোগান থাকবে নির্বাচনি ইশতেহারে। তবে কোনও স্লোগানই চূড়ান্ত হয়নি। ভেতরে-ভেতরে ফ্রন্টের শরিক বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
মোটাদাগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই ইশতেহারের মৌলিক বক্তব্য দাঁড় করানো হবে। এক্ষেত্রে বিগত দিনে বাংলাদেশ সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অগ্রগামী জাতীয় নেতাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত করার বিষয়টি ইশতেহারে যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই নেতা। এ বিষয়টি ২০১৫ সালে ৩ মাস অবরোধের পর খালেদা জিয়া যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সেখানেও ছিল। ওই বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জিয়াউর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের মর্যাদা দেওয়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছিলেন খালেদা জিয়া।
ইশতেহার কমিটির সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত ২৪ অক্টোবর সিলেটের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের আহ্বান জানান। বিষয়টি ফ্রন্টের নেতাদের কাছে ইতিবাচক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইশতেহারে এ বিষয়টির একটি পরিষ্কার বার্তা দেবে ঐক্যফ্রন্ট। এ বিষয়টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফ্রন্টের বাকি সদস্যদের সামনে আলাদা গুরুত্বসহ তুলে ধরবেন বলেও জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ইশতেহার কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে তাদের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলোর সংক্ষেপিত রূপ অনেকটাই এমন, ১. শিশু নিপীড়নমূলক পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা, পরীক্ষাপত্র মূল্যায়নে অসততা বা প্রশ্নফাঁস ঠেকানো। ২. উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির নোংরা খেলা বন্ধ করা, সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। ৩. মাধ্যমিক স্তরে চালু অপ্রয়োজনীয় বইয়ের বোঝা কমিয়ে দেয়া। ৪. শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের পরিবেশ সৃষ্টিতে দখল হওয়া পার্ক ও মাঠগুলো উদ্ধার করা। ৫. কর্মজীবী মায়েদের সন্তানেরা যেন স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক মানসম্পন্ন ডে-কেয়ার গড়ে তোলা। ৬. কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় সরকার বা জাতীয় সরকারের বা প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধি না থাকার বিধান করবে। ৭. শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বেশি করবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। শিক্ষা বিষয়ে দাতাদের পরামর্শ ও অর্থায়নে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করবে না। ৮. মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে মায়ের গর্ভকাল শুরু থেকে শিশুর বয়সের পাঁচ বছর পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করবে। ৯. নাগরিকের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কখনোই বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ দেখবে না। ১০. দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের মান এমন করবে যেন সব শিশু ও নাগরিক দেশেই মানসম্পন্ন শিক্ষা ও চিকিৎসা পেতে পারে। এজন্য সরকারের সবপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারবর্গ যতটা সম্ভব সরকারি শিক্ষা এবং যতটা সম্ভব দেশের চিকিৎসা গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা।
ইশতেহার কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের দলীয় যে প্রস্তাব, তা ইশতেহার কমিটির কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা চাই বেকারত্বহীন বাংলাদেশ। আমরা চাই সরকারি চাকরির সীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত করা হোক। এসবই আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাব। ইশতেহার কমিটি ঠিক করবে, নির্বাচনি ইশতেহারে কী থাকবে।’
ইশতেহার কমিটির সূত্র বলছে, নির্বাচনি ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য থাকবে, তাদের উদ্দেশ্যেই থাকবে বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি। এতে শিক্ষিত বেকারত্ব দূর করা, উন্নয়নের বণ্টন ন্যায্যভাবে করা, দুর্নীতি বন্ধ ও অতীতের দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি যুক্ত হবে। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ আরও কিছু অনুচ্ছেদের বিষয়ে পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি দেবে ঐকফ্রন্ট। এছাড়া খেলাধুলা-বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেটসহ দেশীয় খেলাগুলোকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারাদেশে পুনর্জাগরণের প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে ইশতেহারে।
ইশতেহার কমিটি বলছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময়ে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালু আছে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে চলবে। তবে এই প্রকল্পগুলোকে যে দুর্নীতি ও টাকার হিসাবের গরমিল আছে, এ বিষয়গুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরবে ঐক্যফ্রন্ট।
জানতে চাইলে ইশতেহার কমিটির সদস্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এই ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু ধারণা দিতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো এবং তা বাস্তবায়ন করা। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের বড় অংশজুড়ে থাকবে তরুণদের কথা, বেকারত্ব ও সেটার সমাধানে কর্মসংস্থানের কথা। দুর্নীতিরোধ, সুশাসন নিশ্চিত করাসহ একাধিক কিছু থাকবে ইশতেহারে।’
জাহেদ উর রহমান আরও বলেন, ‘এই যে সরকার উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করে, সেটা যে আসলে হাতে গোনা কিছু মানুষকেই সুবিধা দিয়েছে, তাতে সুষম বণ্টন না হওয়ায় গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে। গরিবের টাকা তুলে ধনিকে ধনী করা হয়েছে মাত্র। এসব বন্ধ করে উন্নয়নের সুফলকে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দেবো এবং পথ বাতলাবো আমরা। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক প্রশ্নপত্র ফাঁস, মানের অবনমনসহ অনেক বিষয় আছে।’ সব নাগরিকের হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় তারা মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন বলেও তিনি জানান।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন, ১৭ নভেম্বর ২০১৮