বাল্যবিবাহকে রেডকার্ড

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।

বাল্যবিয়ে আমাদের দেশের বড় একটি সমস্যা। এর ফলে আমাদের মায়েরা হচ্ছে অসুস্থ, সন্তানরা ভুগছে অপুষ্টিতে। বাল্যবিয়ের সমস্যা এবং সমাধানে আমাদের উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি হতে হবে সচেতন।

কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাল্যবিয়ে দেয়ায় ক্রমেই সমস্যার জাল ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের তৃতীয় পর্যায়ে। গত কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বাল্যবিয়ের এ উচ্চহার শিশু ও মাতৃমৃত্যু বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বাল্যবিয়েকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দেশে আইনত মেয়েদের সর্বনিম্ন বিয়ের বয়স ১৮ বছর। এ বয়সের নিচে বিয়েকে বাল্যবিয়ে হিসেবে গণ্য করা হয়; যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সঙ্গে ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়েকেই বাল্যবিয়ে হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ১৯২৯ সালের বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বলা হয়েছে, বাল্যকাল বা নাবালক বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে বাল্যবিয়ে। শিশু বিবাহকারী পুরুষ (বর), বিয়েতে রেজিস্ট্রেশনকারী কাজী, পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ বাল্যবিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ এ বিয়ের সঙ্গে যুক্ত সবাই শাস্তি পাবেন। তবে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যথাযথ আইন থাকলেও এ দেশের ৫০ শতাংশ নারীর বিয়ে হচ্ছে ১৬ বছরের নিচে। দেশ থেকে বাল্যবিয়ে বন্ধে নীতিমালা প্রয়োগে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
বাল্যবিয়ের ফলে অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বাড়ে, মাতৃমৃত্যু হার বাড়ে এবং জন্ম নেয়া শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। বাল্যবিয়ের স্বীকার মেয়েটির সামনে এগিয়ে যাওয়াটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। লেখাপড়া করে নিজেকে বিকাশের কোনো সুযোগ সে পায় না। দেশের নীতিমালা কেবল কাগজে-কলমে থাকায় আমাদের নারীরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা তৈরি করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।

সম্প্রতি নিকলী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করেছে। “বাল্যবিবাহকে রেডকার্ড” স্লোগান নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের প্রচারণায় বলা হয়েছে :

বাল্যবিয়ের শিকার কন্যাশিশুটির যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে
* শারীরিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে অপুষ্ট থেকে যায়।
* অক্ষম/পরিণত বয়সে মা হতে গিয়ে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
* শিশুটির স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায় এবঙ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
* অপ্রাপ্ত বয়সী মায়ের সন্তান কোনোদিনই শারীরিক পূর্ণতা লাভ করে না।
* শিশুটির সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ঘটে না। সে সারাক্ষণ মানসিক চাপ ও অস্থিরতায় ভোগে।

বাল্যবিয়ের শিকার কন্যাশিশুটির যে সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি হতে পারে
* শিশুটি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে সে শিক্ষাহীনতা, কর্মহীনতা, পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্যের স্থায়ী দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
* বাল্যবিয়ে বহুবিয়ের অন্যতম বড় কারণ
* বিয়েবিচ্ছেদের হার বেড়ে যায়
* নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পায়
* অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার হার কমে যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!