আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আগামী নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে জিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বীরের বেশে জেল থেকে মুক্ত করে আনা হবে, বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য হয় সমগ্র জাতিকে একত্র করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবো, নয়তো ভোটযুদ্ধে গিয়ে ভোটে জিতে বেগম জিয়াকে বীরের বেশে জেল থেকে মুক্ত করে আনবো।
শনিবার (২৪ নভেম্বর ২০১৮) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের বাংলাদেশ, আসন্ন নির্বাচনে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা এবং করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’
নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপিকে বলেছি জোটের প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগ করার মতো করবেন না। যোগ্য প্রার্থীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।’
‘আসন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার দলেও ৪৬ জন প্রার্থী ছিল। কিন্তু আমি তাদের বলেছি যোগ্য প্রার্থীই কেবল নমিনেশন পাবে। বিএনপির পিঠে সওয়ার হয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। যারা নমিনেশন পাবে তাদের অবশ্যই নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে সরকারি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। কারণ আপনারা বিপদে পড়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের সময় নির্ভয়ে কাজ করেন। সত্যের পক্ষে থাকেন। সত্য প্রতিষ্ঠা করেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকেই আমাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা সুযোগ খুঁজছে সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য। সরকারের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য সমান সুযোগ থাকবে।’
ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশ্য সাবেক এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যাপারে অন্যায় কিছু আশা করা ঠিক হবে না। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাচনের যোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করতে হবে। বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে পার হওয়ার ইচ্ছা থাকলে হবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও পুলিশের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে না। আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। পুলিশ ও আওয়ামী গুণ্ডা বাহিনীর জন্য বাড়িতে থাকতে পারি না। নিজের এলাকায় যেতে পারি না। নেত্রীকে জেলে রেখে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, আর নয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। আমরা মুক্তি চাই। কোনো দেশের কাছে আমরা পরাধীন থাকতে চাই না। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সেখানে গণতন্ত্র না থাকায় দেশটার কি অবস্থা হয়েছে। আমাদেরও তাই হবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে রাস্তায় নামতে দেবে না। পুলিশ আছে। এসব ম্যানমেনে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমি এমন কথা শুনতে চাই না। বাতাস অন্যদিকে বইছে দেখছেন না?’
‘ঢাকার মিটিং, রাজশাহীর মিটিংয়ে দেখেননি? সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপরও মানুষ পায়ে হেঁটে সমাবেশে চলে এসেছে। ৬০-এর দশকে মাওলানা ভাসানীর ডাকে মানুষ যেভাবে এসেছে। এখনও সেভাবে মানুষ আসছে। যাদেরকে ভয় করেন, সেই বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে। তারা কোন পথে যাবে সেটার জন্য যোগাযোগ করছে। যখন বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে তখন ভয়ে সরকারের হাঁটু কাঁপা শুরু হয়েছে। বুঝতে পারছেন তাদের ভীত নড়ে গেছে। এর পরও যারা এই সরকার ও প্রশাসনকে ভয় পান তাদের দিয়ে কিছু হবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। তার জন্য সুবিচার চাই। কারণ সুবিচার হলেই তিনি মুক্তি পাবেন।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু এখন কি বলতে পারব আমরা নির্বাচন করব না? সরকার তো সেটাই চায়। তারা জানে নির্বাচনে লড়াই হলে জিততে পারবে না। এই জন্য সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর আমরা যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার কিন্তু মারাত্মক ধান্দাবাজ। চতুর। তারা বলছে আসন্ন নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে পারবে কিন্তু তারা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। কোনো রিপোর্ট তারা বাইরে পাঠাতে পারবে না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন অনেক কঠিন। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে ফোরটুয়েন্টি মার্কা নিবাচন হয়েছিল, তাতে যে ভারত সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছিল। তারাই এবার বলছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সঙ্গে ভারত থাকবে না।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার জন্য যে ২১ দিন সুযোগ পাব। তখন আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ চষে বেড়াব। আর জেলা পর্যায়ের নেতারা শুধু মানুষের বোঝাবে।’
মান্না বলেন, ‘সরকার বলেছিল, ১৫ তারিখের পর কোনো বিরোধী নেতাকে গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু করেছে। এখনো গায়েবী মামলা দিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে জনগণের মধ্যে এই সরকারের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জমেছে।’ তিনি বলেন, ‘সামনে আমরা এমন কৌশল নেব। এমন লড়াই করব যে, সরকার পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হবে।’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, সংগঠনের নেত-কর্মীসহ রণঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : সারা বাংলা, ২৪ নভেম্বর ২০১৮