আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার খয়েরতলা গ্রামের আলী আকবর মুন্সির ছেলে যুবক বিল্লাল হোসেন কোনোরকম জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উপৎপাদনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। রাতে শহরের কলাহাটা মোড়ে আয়না ইজিবাইক চার্জার হাউজ নামে তার দোকানে গেলে দেখা যায়, ১টি চার্জ কন্ট্রলার, ২টি রাডার, ১টি ডিসি মটর, ১টি ডায়নামা, কয়েকটি পুলির সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়েছে তার নিজের তৈরি ২টি সার্কিট।
বিল্লাল হোসেন জানান, প্রথমে ব্যাটারি দিয়ে মটরটি চালু করা হয়। তারপর স্বয়ংক্রীয়ভাবে ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পুলিতে বেল্ট ঘুরতেই থাকে। এ থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। সেই উৎপাদনকৃত বিদ্যুতেই চলছে ইজিবাইকের চার্জ দেয়ার কাজ।
আত্মপ্রত্যয়ী যুবক বিল্লাল হোসেন আরো জানান, তারা ৩ ভাই ১ বোন। অন্য ভাইয়েরা শ্রমিকের কাজ করেন। আর একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেসহ ভাইয়েরা সকলে কঠোর পরিশ্রম করে কোনো রকমে সংসার চালান।
এ অবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তিতে কোন রকমের জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এটা কম খরচে বাসাবাড়িতেও ব্যবহারযোগ্য। তিনি জানান, আরও বেশি ভোল্টেজের ডায়নামা কাজে লাগিয়ে একটি অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চাহিদা পূরণের চিন্তা-ভাবনা করছেন তিনি। তার দাবি এ প্রযুক্তিই পারে বিদ্যুতের অভাব মেটাতে।
তিনি বলেন, ‘এ সাফল্যের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদী কিনতে একাধিকবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের গবেষণা আর পরিশ্রমের পর আজ সফলতা এসেছে। এখন বেশ ভালো লাগছে।’
তার এ প্রকল্প সফল করতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর নিজের পরিশ্রম তো হয়েছেই বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা মাস্টারপাড়ার ইজিবাইক চালক সুজিত দাস জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতে বিল্লালের উৎপাদিত বিদ্যুতে বাইক চার্জ দিয়ে সারাদিন ভাড়ায় ইজিবাইক চালাচ্ছেন। এতে চার্জের কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। তিনি বলেন, তার এ প্রযুক্তিতে উৎপন্ন বিদ্যুতে চার্জ দিতে খরচও কম লাগছে।
ইজিবাইকের অন্য এক চালক শহরের কলেজপাড়ার প্রদীপ দাস জানান, ইজিবাইকে আগে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ লাইনের একটি দোকান থেকে রাতে চার্জ দিতেন। এখন নতুন প্রযুক্তিতে উৎপন্ন বিদ্যুতে চার্জ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করলে বিদ্যুতের ওপর চাপ কমে যাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী শেখ রেজা নাছিম জানান, আমি শুনেছি কালীগঞ্জের এক যুবক নিজ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছে। শুনেছি আমি এখানে যোগদানের আগে এ ছেলেটি বিদ্যুৎ অফিসে ক্যাজুয়াল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। পারিবারিক প্রয়োজনে আপাতত কালীগঞ্জের বাইরে আছি। আমি ফিরেই তার এটা দেখতে যাবো। তবে যা শুনেছি তা যদি ঠিক হয় তাহলে অবশ্যই ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানাতে হবে।
এ বাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বরত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহম্মদ আব্দুর রব জানান, কালীগঞ্জের এক প্রতিভাবান যুবক নিজের প্রযুক্তিতে কোন জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে কাজে লাগাচ্ছে এটা শুনে বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়েছিলাম। যা শুনেছি তার সত্যতা রয়েছে। দেখলাম কোনরকম জালানী ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। প্রতিভাবান এ ছেলেটি মেধা খাটিয়ে যে প্রযুক্তি তৈরি করেছে তা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র : ইত্তেফাক, ২৪ নভেম্বর ২০১৮