বিশেষ প্রতিনিধি ।।
১০ বছর ধরে অর্ধনির্মিতই রয়ে গেছে। ফাঙ্গাস আর আগাছায় ছেয়ে গেছে ভবনগুলো। প্রতিটি ভবনের ফাটল ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। সীমানা প্রাচির ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিণত হয়েছে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভয়াশ্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করে জানা যাচ্ছে না ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটির এ হেন অবস্থায় নিরাপত্তা, চিকিৎসক, জনবলের অভাবে সেবা কার্যক্রম পড়েছে মুখ থুবড়ে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে হাওর জনপদের প্রায় দুই লক্ষ অধিবাসী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে সারা দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেয় মেসার্স কাজল বিল্ডার্স, ২৯০/১ সোনারগাঁও রোড, হাতিরপুল, ঢাকা নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
মূল হাসপাতাল ভবনসহ কয়েকটি কোয়ার্টার নির্মাণে প্রাক্কলিত দর ধরা হয় ৫ কোটি ১৪ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। কার্যাদেশ নং-১১২/তাংঃ১৯/০৮/২০০৮ ইং। কার্যাদেশ চুক্তি মূলে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্তির কথা।
ঠিকাদার কাজ শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে যায়। ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হবার আগেই উত্তোলন করা হয় ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করা হয় কাজ। ২০১৩ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নিকলীতে আগমন উপলক্ষে ফাটল আর ছেয়ে যাওয়া ফাঙ্গাসের ওপর তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয় প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ। তারপর থেকে দেখা নেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল বিল্ডার্সের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির।
বাকী ৪০ শতাংশ কাজ শেষ না হওয়ায় ইতিমধ্যেই ভবনগুলির নানা অংশ খসে পড়ছে। দেখভালের কোনো লোক না থাকায় অর্ধনির্মিত ভবনগুলি পরিণত হয়েছে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আখড়া হিসাবে। জুয়া, প্রমোদ ও নেশার জন্যে ভবনগুলো আলাদা আলাদা নামকরণে পরিচিতি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় বেড়েছে চুরি। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা রাত্রি যাপন করতে পারছেন না। ভবন সংকটে পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা। মা ও শিশুদের জন্য নির্মিত দ্বিতল ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে অফিস ও ডরমেটরি হিসাবে। নারী ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা না থাকায় কাগজে-কলমে নারী ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে দেখা মিলে না। প্রসব থেকে শুরু করে মেয়েলি নানা সমস্যায় উপজেলার নারী রোগিরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানায়, একই সাথে শুরু হওয়া জেলার অপরাপর হাসপাতাল উন্নীতকরণ প্রকল্প শেষ হয়ে দিব্যি কার্যক্রম চলছে। কোন কোনটির পুনঃসংস্কারের কাজও চলছে। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালটির কাজ শেষই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লেখালেখি চলছে। ফল পাচ্ছি না।
কিশোরগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অফিস ফোনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভবন নির্মাণ বিষয়ক প্রশ্নে এ প্রতিনিধিকে বলেন, হাসপাতালটির কাজ এত দিনেও শেষ না হওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি বর্তমানে ওপরের মহলে আছে। এখন আমাদের কিছু করার নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। একই কথা কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসেরও।
নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম জানান, এ আসনের এমপি মহোদয় আলহাজ্ব আফজাল হোসেন বেশ কিছুদিন আগে একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। শীঘ্রই রি-টেন্ডার দিয়ে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।