মীর মোকাম্মেল আহছান ।।
আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে। ক্রিকেট উৎসবের শহর ঢাকা। চারদিকে সাজ সাজ রব। রাস্তায়-রাস্তায় প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন আর রঙিন আলোর ঝলকানিতে চিরচেনা শহর অচেনা হয়ে ধরা দিচ্ছে শহরবাসীর কাছে। বাংলাদেশে চলছে ক্রিকেটের মহোৎসব টি-২০ বিশ্বকাপ। শর্টার ভার্সন ক্রিকেটে উত্তেজনার শেষ নেই। রয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সংশয়, আনন্দ কিংবা লাল-নীল কষ্টের বেদনাময় মহাকাব্যিক দ্যোতনা। অবয়বে ছোট, কিন্তু বিনোদনের চূড়ান্ত মার্গে পৌছে দেয় টি-২০। আবেগ কাজ করে অন্যমাত্রায়। একটি ওভার বদলে দেয় পুরো ক্রিকেট দুনিয়াকে। বদলে দেয় স্টেডিয়ামের নান্দনিক রূপ ও ঐশ্চর্য। এখানেই এর বিশেষত্ব।
এত নান্দনিকতার মাঝেও মনে পড়ে প্রিয় গ্রাম মাতৃভূমি নিকলীকে। এক সময় নিকলীর ক্রীড়াঙ্গনও ছিল সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মাতোয়ারা। ১৯১৫ সালে স্বর্গীয় রমনী প্রসাদ (টাঙ্গাইলবাসী) তালুকদারের নেতৃত্বে নিকলীতে গড়ে উঠে ‘ওয়েস্টার্ন স্পোর্টিং কাব’। সেই সময় বেশ জমজমাট ছিল ‘রাজবালা শীল্ড’ টুর্নামেন্ট। ত্রিশের দশকে উক্ত টুর্নামেন্টে মরহুম কারার রইচ উদ্দিন, স্বর্গীয় প্রগতি আচার্য্য, ভেঙ্গু মিয়া, নরেন্দ্র মোহন আচার্য, খগেন্দ্র চৌধুরী, মানিক কর্মকার, যামিনী সাহা, মরহুম আমির উদ্দিন আহম্মেদ (সাবেক এমপি), মরহুম কারার ইনছাব উদ্দিন, বিষ্ণু সূত্রধর মাতিয়ে রেখেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনকে।
তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্য গ্রামে-গঞ্জে আলোচনার ঝড় তুলতো। নিকলীকে পরিচয় করিয়ে দিতে নতুন নতুন জনপদে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ছাড়াও নিকলীর কীর্তিমান ক্রীড়াবিদরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনায় তাদের কীর্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেশের বাইরেও ভারতের বিভিন্ন স্থানে ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে ফুটবল মাঠকে মাতিয়ে তুলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ক্রীড়াঙ্গনে আলেঅচিত হয়ে উঠেছেন কারার গিয়াস উদ্দিন, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রঙ্গু মিয়া, সামসুদ্দিন কারার, কারার সুনামউদ্দিন, সেকান্দর, সুধাংশু, কারার সফিউদ্দিন, মলু হোসেন তালুকদার, আবদুর রশিদ, কিশোরী দেবনাথ, একিন আলী, চান্দালী মিয়া। দাপটের সাথে তাদের বিচরণ ছিল ক্রীড়াঙ্গনে। (সূত্র : কিশোরগঞ্জ ইতিকথা, পৃষ্ঠা-৩১০)।
ক্রীড়ার মাধ্যমে তারা নিকলীকে পরিচয় করিয়ে দেন ভিন্নমাত্রায়। তাদের নৈপুণ্য গল্প হয়ে মানুষের মুখে মুখে ভেসে বেড়ায়। সেই গল্পের মাঝে স্থানীয় মানুষেরা রঙ লাগিয়ে আরো গল্পময় করে তুলে। ছেলেবেলায় এমনি অনেক গল্প শুনতাম। নিজের অজান্তেই কল্পনায় সেজে যেতাম খেলার মাঠের কারার সামসুদ্দিন (পাগলা ভাই)।
হালে নৌকাবাইচ, হাডুডু, যাত্রাগান আর ঘাটুগানের ঐতিহ্যের মতোই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনও যৌবন হারিয়েছে। হারিয়েছে তার অতীত ঐতিহ্য। আগের ঐতিহ্য হয়তো আমরা আর ফিরে পাব না কখনোই। তবুও আশায় বুক বাঁধি, ঘুমিয়ে পড়া নিকলীর ক্রীড়াঙ্গনকে পুনর্জীবিত করতে আজকের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ পৃষ্ঠপোষক হয়ে এগিয়ে আসবেন। নবীনরা মেধা ও শ্রম দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে গড়ে তুলবেন নতুন রূপে। এই স্বপ্ন নিয়ে ঢাকাস্থ নিকলী সমিতির পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে নূরলদিনের মতো ডাক দিয়ে যাই- জাগো ভাগে কণ্ঠে সবার।
সূত্র : ঢাকাস্থ নিকলী সমিতির পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ২০১৪ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা