আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহায়তায় জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা চাঁদে কলোনি বানানোর ঘোষণা দিয়েছে। এক দশকের কাছাকাছি সময়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা বিজ্ঞানীদের।
গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মূল লক্ষ্য, সৌরজগত সম্পর্কে আরো গবেষণা চালাতে চাঁদে আবার মহাকাশচারী পাঠানো। বহির্জগতে যাত্রার বিরতিস্থান হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি চাঁদ থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ আহরণ করা যায় কিনা, চলবে সে গবেষণাও।
২০০৯ সালে জাপানের মহাকাশযান কাগুইয়া চাঁদে গিয়ে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ক্যালসিয়াম, টাইটেনিয়াম ও আয়রনের উপস্থিতি শনাক্ত করে, সংগ্রহ করা হয় কিছু নমুনাও। এর ফলে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ আহরণের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়।
এতদিন পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে মানুষের বসবাসের জন্য চাঁদের পৃষ্ঠকে অনুপযোগীই ভাবা হতো।
বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
চাঁদে কোন খনিজ কী পরিমাণে উপস্থিত জানতে আরো কিছু মহাকাশ অভিযানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি- জাক্সা। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ২০১৩ সালে চীনের জেড ব়্যাবিট লোনার রোভারের সাফল্যে উজ্জ্বীবিত হয়েই এই পথে এগোচ্ছে জাপান।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চাঁদে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জমাটবাঁধা পানি এবং পর্যাপ্ত লৌহের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে হিলিয়াম-৩ গ্যাসের উপস্থিতি, যা কেবল চাঁদেই পাওয়া যায়। এই গ্যাসকে সহজেই নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানিরা।
টোকিও-ভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শিমিজু কর্পের মুখপাত্র হিদেও ইমামুরা জানান, ‘‘আমরা সেই ১৯৮৭ সাল থেকে চাঁদে বসতি স্থাপনের চিন্তা শুরু করেছি। আমরা তখন থেকেই বিশ্বাস করি, এমন এক দিন আসবে যখন মানুষ চাঁদে বাস করতে শুরু করবে।”
ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, এই মুহূর্তে তিনটি লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। প্রথমত, চাঁদে লঞ্চ প্যাড এবং সংশ্লিষ্ট অন্যসব অবকাঠামো নির্মাণ করা। দ্বিতীয়ত, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া আবহাওয়া ও টেলিকমিউনিকেশন সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। তৃতীয়ত, চাঁদের পৃষ্ঠে সঠিকভাবে কাজ করবে এমন নির্মাণপ্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্মাণ করা।
গবেষকরা এখন চাঁদের মাটির সাথে চাঁদের বরফগলা পানি মিশিয়ে বিশেষ ধরনের ‘চন্দ্র কংক্রিট’ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিদ্যুতের চাষ!
শিমিজু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অবশ্য আরো একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে চাঁদকে সৌরবিদ্যুত প্ল্যান্ট হিসেবে কাজে লাগাতে চায় তাঁরা। সোলার প্যানেল দিয়ে চাঁদের ৪০০ কিলোমিটার ঘিরে ফেলতে চায় শিমিজু। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বিদুৎ সংগ্রহ করা হবে পৃথিবীতে। এই পরিকল্পনার নাম দেয়া হয়েছে ‘লুনা রিং’।
এই লুনা রিংয়ের মাধ্যমে ১৩ হাজার টেরাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
শিমিজুর ওয়েবসাইটে এক বলা হয়েছে, ‘‘সীমিত সম্পদের ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার চেয়ে কিভাবে অফুরন্ত ক্লিন এনার্জি উৎপাদন করা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সে সন্ধান চালিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। উদ্ভাবনী ভাবনা ও অগ্রসর প্রযুক্তি লুনা রিং, মানুষের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সমবাবনা তৈরি করেছে।”
জাক্সার সাথে কাজ করছে আরেক প্রতিষ্ঠান- কাজিমা। পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এমন কিছু নির্মাণ যন্ত্র এরই মধ্যে চাঁদে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরুর করেছে তাঁরা। পৃথিবীতে বেশকিছু নির্মাণকাজে দূরনিয়ন্ত্রিত ট্রাক ও বুলডোজার ব্যবহার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকদের বিশ্বাস, পৌনে চার লাখ কিলোমিটার দূরেও কাজ করবে তাঁদের এই প্রযুক্তি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮