মহসিন সাদেক, লাখাই থেকে ।।
পানিতে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছে মৎস্য ও কৃষি ভাণ্ডারখ্যাত লাখাইয়ে বহমান সুতাং নদীতে। ফলে সুতাং নদীর সব ধরনের মাছসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। গত দুই দিন যাবত বহমান সুতাং নদীর লাখাই অংশের ভুমাপুর থেকে পশ্চিম বুল্লা, পূর্ব বুল্লা পর্যন্ত বিভিন্ন বাঁকে বোয়াল, রুই, মৃগেল, টেংরা, টাকি, পুটি, বেলেসহ বিভিন্ন প্রজাতি মাছ ভেসে উঠছে। সেই সাথে ভেসে উঠছে মৃত ও অর্ধমৃত কাকড়া, বেঙ্গরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা সুতাং যার সেচনির্ভর উপজেলার কৃষির বৃহৎ অংশ সেই সুতাং-এর স্বচ্ছ পানি হঠাৎ ঘোলাটে দুর্গন্ধ ও কালো রঙ ধারণ করে আছে। পানির দুর্গন্ধে নদীর তীর ঘেষা যাচ্ছে না। ফেনাযুক্ত পানিতে ভেসে উঠছে বোয়াল, রুই, মৃগেল, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। সেই সাথে বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নদীর দুই পাড়ে শত শত শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে আহরণ করছে ভেসে উঠা মাছ। দূষিত কালচে রঙের পানিতে মারাত্মক দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে মাছ ধরতে ধুম পড়েছে নদীর তীরবর্তী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। মাছ ধরছে এমন কয়জনের সাথে এ প্রতিনিধির আলাপকালে তারা জানান, প্রচণ্ড চুলকানি হলেও এত সহজে মাছ ধরার সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে নারাজ। কি কারণে নদীর মাছ ভেসে উঠছে জানতে চাইলে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন হয়তো অলিপুর থেকে কোনো শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সুতাংয়ে ছাড়ার কারণে আমাদের এত বড় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের সাথে এ প্রতিনিধির আলাপকালে তিনি জানান, সুতাংয়ের উল্লেখিত অংশে পানি কম হওয়ায় বিষক্রিয়া বেশি হচ্ছে, শুধু মাছই নয় অন্যান্য প্রাণীও মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্ভবত কোনো শিল্প বর্জ্য নিঃসরণের ফলে এমনটা হচ্ছে। তবে পরীক্ষাগারে পাঠালে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেববল সরকারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, যেহেতু নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে সেহেতু গাছপালা বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বর্জ্য থেকে অতিরিক্ত টক্সিসিটি পানিতে মিশে যাওয়ার ফলে ফলন কম হওয়ার আশংকা থাকে। আহরণ মৃত মাছ গ্রহণের ফলে কি প্রভাব পরতে পারে এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও আব্দুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীতে যদি শিল্প বর্জ্য মিশে থাকে এবং মাছ মারা যায় তবে এ মাছ খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। বিকল হতে পারে শরীরের গুরুরূপূর্ণ অঙ্গ। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান এডঃ মোশফিউল আলম আজাদ বলেন, নদীর পানিতে বিষক্রিয়ার ফলে মরে যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন প্রানী যা বিরূপ ক্রিয়া পড়বে কৃষিসহ জীব বৈচিত্র্যের ওপর। হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের লাখাই শাখার সভাপতি বাহার উদ্দিন বলেন, দ্রুত অনুসন্ধানমূলক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হবে উপজেলাবাসী। এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে সংবাদ পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছি।
এদিকে কৃষিকাজে ব্যবস্থা উপজেলার কৃষকেরা সুতাংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত কালো রঙের পানি দেখে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সেচ নিয়ে। খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলার কৃষকেরা এহেন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পরিত্রাণের জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।