শীতকালে গরম কম্বল সবচেয়ে প্রিয় একটি জিনিস থাকে প্রায় সবার কাছেই। একটু গরম জায়গায় বসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা খেতে কে না পছন্দ করে। শীতকালের বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রাচুর্যতায় আমরা অনেকেই খুব ভোজনরসিক হয়ে যাই। এর অনেক কারণের মাঝে একটি হলো শীতকালে আমাদের বিপাকক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়। এর কারণ শীতকালীন কিছু খাবার দেহের উষ্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট খাবারের এই প্রভাবকে খাবারের গতিশীল আচরণ বলা হয়ে থাকে।
কিছু খাবারের জটিল শর্করা এবং বেশি পরিমানের আঁশ খাবারগুলোকে ধীরে ধীরে হজম হতে সাহায্য করে। যার ফলে দেহের বিপাক ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায় এবং তা দেহের উষ্ণতা বাড়ায়। এছাড়া দেহের জরাজীর্ণ কোষের পুনর্গঠনে শীতকালের খাবার তালিকায় এসব উষ্ণতাদায়ক খাবার রাখাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
গাজর
গাজর হচ্ছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গাজর ত্বককে সুস্থ রাখে, চোখ সুরক্ষিত রাখে, সাধারণ ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং চুলকে করে স্বাস্থ্যোজ্বল। এটি একটি উষ্ণতাদায়ক খাবার এবং এটি কাঁচা বা রান্না যেকোনো ভাবেই খেতে পারেন।
টক ফল
উজ্জ্বল বর্ণের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল কমলা, জাম্বুরা জাতীয় ত্বক ফল গুলো থেকে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এগুলো ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এসব ফল শীতকালে দেহের উষ্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মাংস ও ডিম
আগে আমরা মুরুব্বিদের কাছে শুনতাম জ্বর বা ঠাণ্ডার সমস্যায় পথ্য হিসেবে মুরগির সুপের গুনাগুনের কথা। তবে এটি এখন বৈজ্ঞানিক ভাবেই প্রমানিত। কারণ মুরগি হচ্ছে দেহকে গরম করার খাবার এবং এটি জ্বর, ঠাণ্ডা সারাতে সাহায্য করে। এছাড়া ডিম খেলে শরীর গরম হয় এবং এটি শীতকালে ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। তাই শীতকালের খাবার তালিকাতে এই দুটি খাবার অবশ্যই রাখা উচিত।
আদা ও রসুন
ঠাণ্ডার সমস্যা এবং কাশি সারাতে আদা রসুনের মিশ্রণ খুবই ভাল কাজ করে, সেই সাথে শীতকালে দেহকে উষ্ণ রাখতেও সাহায্য করে। আদা দিয়ে তৈরি মশলা চা খেতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন খাবারে রসুন যোগ করে খেতে পারেন।
পেয়ারা
সবাই জানে যে টক ফলে ভিটামিন সি থাকে কিন্তু অনেকেই এটা জানেন না যে পেয়ারাতে আরো অনেক বেশি ভিটামিন সি থাকে যা অনেক বেশি প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।এতে আরো থাকে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম। এই ফলটিও শীতকালে দেহের উষ্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু
একটি সত্যিকারের বিস্ময়কর খাবার হচ্ছে এই মধু যা নিয়মিত ভাবে শীতকালের খাবার তালিকায় থাকা উচিত। এটি চিনির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায় এবং ঠাণ্ডা ও গলা ব্যাথায় কার্যকরী ঔষধ হিসেবেও কাজ করে। যদি শীতকালে মধু জমে যায় তবে তা সামান্য গরম করলে আবার তরল হয়ে যায় এবং এটি ব্যবহার করা যায়। এটি শীতকালে শরীরকে উষ্ণ করার জন্য একটি উত্তম খাবার।
মেথিশাক
ভিটামিন কে, আয়রন এবং ফলিক এসিড সম্পন্ন সবুজ শাক হচ্ছে এই মেথিশাক। এটি রক্তের লোহিত কনিকার পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি দেহের তাপমাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে এবং শীতকালে দেহকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
বেদানা
বেদানা হচ্ছে আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল এবং ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস। বেদানা জ্বর প্রতিরোধ করতে পারে এবং শীতকালে ঠাণ্ডা লাগা কমাতে পারে। এটি রক্তের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ধমনীর জমাট বাধা খুলতে পারে। শীতকালের জন্য প্রয়োজনীয় উষ্ণতাদায়ক ফল এটি।
শুকনো ফল এবং বাদাম
কাঠবাদামকে সাধারণত শুকনো ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে যা ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। শীতকালের খাবার তালিকায় এই খাবারটি থাকলে তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত ভালো কাজ করে কারণ এটি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শুকনো ডুমুর ফল, আখরোট, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদামও অনেক উপকারি। কারণ এগুলো সব গুলোই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এবং শীতকালে চেহারায় উজ্জলতা আনতে সাহায্য করে।
আলু
মিষ্টি আলু এবং আলু উভয়েই শীতকালের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ সাহায্য করে। এটি শীতকালের অন্য অনেক দামী খাবারের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে। এগুলো বিভিন্ন ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে এবং সারা বছর জুড়েই এটি পাওয়া যায়।
টক দই
যদি দুধ বা দইয়ে অ্যালার্জি না থাকে তাহলে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক খাবারটি বর্জন করার কোনো কারনই নেই। প্রোবায়োটিক হচ্ছে একটি স্বাস্থ্য বান্ধব ব্যাকটেরিয়া। দই অনেকের মিউকাস মেমব্রেনে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু সাধারণ সব মানুষদের জন্য শীতকালের জন্য উষ্ণতাদায়ক একটি খাবার হচ্ছে এই দই।
লিখেছেন : শওকত আরা সাঈদা (লোপা)
জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ
এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্থ
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (স্নাতকোত্তর) (এমপিএইচ)
মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া।
সূত্র : প্রিয়.কম