আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবার প্রলোভনে পড়ে কোন বাংলাদেশী যেন অসাধু আর্থিক লেনদেনে না জড়িয়ে পড়েন- সেজন্য সতর্ক করে দিয়েছে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস।
জাপানে ক্রমবর্ধমান কর্মী সংকটের কারণে আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন খাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিদেশী কর্মী নেয়া হবে- এমন খবরের প্রেক্ষাপটে এক বিবৃতিতে দূতাবাস বলেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হচ্ছে- যদিও যেসব দেশ থেকে আপাতত কর্মী নেয়া হবে তার তালিকায় বাংলাদেশ নেই।
জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জানান, এ কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস অনেকটা বাধ্য হয়েই বিবৃতিটি দিয়েছে। তিনি জানান, জাপানে বিদেশী কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে একটি আইন পাস হয়েছে এবং ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে। প্রাথমিকভাবে এজন্য আটটি পূর্ব এশীয় দেশকে নির্বাচন করা হয়েছে- যেগুলো থেকে ঐতিহ্যগতভাবেই লোকেরা জাপানে কাজ করতে আসতেন। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমারের মতো কয়েকটি দেশ। তাদের নির্মাণ, রেস্তোরাঁ, কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ দেয়া হবে।
এই সম্ভাব্য তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। তবে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জানান, বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত আছে।
জাপানে আগে কখনো বড় সংখ্যায় বিদেশী কর্মী নেবার কথা ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন দেশটিতে বিভিন্ন খাতে অদূর ভবিষ্যতে কর্মীর অভাব ঘটবে এমন ধারণা করছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা এবং সে জন্যই আগামী পাঁচ বছরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বিদেশী কর্মীকে জাপানে কাজের সুযোগ দেয়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
“এ নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা বলেছি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবার জন্য। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছেন”- বিবিসি বাংলাকে টোকিও থেকে টেলিফোনে জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
বাংলাদেশের দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “জাপানে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কোন আর্থিক লেনদেন কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করার জন্য টোকিও বাংলাদেশ দূতাবাস অনুরোধ করছে।”
জাপানে বিদেশী কর্মী নেয়া হবে এ খবর বেরুনোর পর যেন একে কেন্দ্র করে কোন অসাধু তৎপরতা না চলতে পারে- সেজন্যই এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে, বলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
বাংলাদেশে এ ধরনের তৎপরতা কতটা চলছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে কথা হয় জনশক্তি রপ্তানি এজেন্সিগুলোর প্রতিষ্ঠান বায়রা’র আবুল বাশারের সাথে, যিনি দেই মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন।
আবুল বাশার বলেন, তাদের সংগঠনে ১২শ’ এজেন্সি আছে, তবে জাপানে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে কেউ অর্থ নিচ্ছে এমন খবর তিনি জানেন না। তবে তাদের সংগঠনের বাইরে এমন দালাল চক্রের অস্তিত্ব আছে যারা অতীতে জাপানে শ্রমিক-কর্মী পাঠানোর কথা বলে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ নিয়েছে- এমন দৃষ্টান্ত আছে।
এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে মি. বাশার বলেন, বাংলাদেশের কর্মী নেবার ব্যাপারে জাপান সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে কেউ যেন এরকম দালালের খপ্পরে না পড়েন, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
জাপানে উচ্চশিক্ষা এবং ছাত্রাবস্থায় পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশী তরুণদের আকৃষ্ট করতে প্রচুর বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে দেখা যায়।
বাংলাদেশের ছাত্র বা অভিবাসী কর্মীদের জন্য জাপান যে একটা সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে এ কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই দেশের ২৫টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাপানী ভাষা শেখার কোর্স চালু হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, তবে জাপানে বিদেশীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শর্ত হলো জাপানী ভাষা শেখা, তা ছাড়াও জাপানের জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নেবার জন্য অন্যান্য কিছু ‘লাইফ স্কিল’ এবং কর্মসংস্কৃতি সম্পর্কেও তাদের অবহিত হতে হবে।
জাপানে এখন ১৫-১৬ হাজার বাংলাদেশী এখন অবস্থান করছেন- যারা মূলত অপেক্ষাকৃত উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী। রাষ্ট্রদূত রাবাদ ফাতিমা আরো জানান, তথ্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এসব খাতে বেশ কিছু বাংলাদেশী কাজ করছেন এবং এসব খাতে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদের নিয়োগ নিয়ে কাজের সুযোগ আগের মতই অব্যাহত থাকছে।
তিনি জানান, জাপানে চাকরির ব্যাপারে যে কোন তথ্য জানার জন্য ইচ্ছুক বাংলাদেশীরা কোন বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে বরং বাংলাদেশ দূতাবাস, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮