আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে হিসাবরক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন পদ সৃজন, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রধান শিক্ষক” প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং বিদ্যালয়ে পাঠদান ও তদারকিতে আরো সক্রিয় করতে বিদ্যালয়ে একজন হিসাবরক্ষক প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করে কার্যক্রম চলবে।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি ২০১৯) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ে সব অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়ের সব ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ও পরিচালনাসহ বিদ্যালয়ের দাফতরিক সব কর্মকাণ্ড এককভাবে প্রধান শিক্ষককে করতে হয়। এ ছাড়াও সরকারের নানা ধরনের নির্দেশনামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় প্রধান শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের পাঠদান পরিচালনা-তত্ত্বাবধান-সমন্বয় সঠিকভাবে করতে পারছেন না। তাই প্রধান শিক্ষককে পাঠদানে আরো মনোনিবেশ করাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সূত্র জানান, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে শিক্ষানীতিতে। সরকারের নতুন মেয়াদে এটি শতভাগ কার্যকর করা না গেলেও এর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ভর হিসাব সংরক্ষণ-পরিচালনা সমীচীন হবে না। এ ছাড়া এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এসবের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অনেক বিদ্যালয় থেকে হিসাব সংরক্ষণে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই একজন যোগ্য-মানসম্পন্ন “হিসাব রক্ষক” জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব বিবেচনায় দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে “হিসাব রক্ষকের পদ সৃষ্টি”র কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সহস্রাব্দের উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) শর্তানুসারে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে বিগত দিন ও বছরগুলোর চেয়ে এখন অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর। প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ এবং প্রাথমিকে গণিত অলিম্পিয়ার্ড চালু অন্যতম। এসব কারণে প্রধান শিক্ষককে পাঠদান নিশ্চিত করতে আরো বেশি মনোযোগী করতেই হিসাব রক্ষকের পদ সৃষ্টির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৬৭২টি, বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ২০৭টি, নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬ হজার ১৫৯টি এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৬১টি। এসব স্কুলে ১ জন করে “হিসাব রক্ষক” নিয়োগ দেয়া হবে। এ হিসাবে সারা দেশে ৬৫ হাজার ৯৯ জন “হিসাব রক্ষক” হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
কবে নাগাদ “হিসাব রক্ষক” পদে নিয়োগ দেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ সৃজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ সময় লাগবে। চলতি অর্থবছরে “হিসাব রক্ষক” পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার চেষ্টা করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন মানসম্পন্ন “হিসাব রক্ষক” পদে নিয়োগ দেয়া হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা আরো নিশ্চিত হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওপর চাপ কমবে।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল, ৪ জানুয়ারি ২০১৯