মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন!

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের- ডাকসু নির্বাচন হতে পারে মার্চের মধ্যেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাও তাই। এখন প্রশ্ন হলো এজন্য কতটুকু প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?

আদালতের নির্দেশে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে কমিটি হয়েছে। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কমিটির প্রধান আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হলে ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং তফসিল ঘোষণা করার কথা। ১০ জানুয়ারির ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পাসে সক্রিয় সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘আমরা গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো যাতে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য তাদের গঠনতান্ত্রিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে পরীক্ষার তারিখ যেন সুনির্দিষ্ট থাকে, সেভাবে ডাকসু নির্বাচনের তারিখও প্রতিবছর সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ডাকসুর মেয়াদ কোনোভাবেই ৩৬৫ দিন বা এক বছরের বেশি হতে পারবে না। আমরা গঠনতন্ত্রের বাংলা সংস্করণ চেয়েছি।”

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা সেদিনের বৈঠকে প্রক্টরিয়াল নিরাপত্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। আমাদের নেতাকর্মীরা হলগুলোতে অবস্থান করতে পারছেন না। তারা ক্যাম্পাসেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা বা ক্লাস করতে পারেন না। তাই ডাকসু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো ক্যাম্পাসে সহাবস্থান। এই সহাবস্থান নিশ্চিত করা না গেলে ডাকসু নির্বাচন অর্থবহ হবে না।”

আর ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘‘সহাবস্থানের বিষয়টি এককভাবে কোনো ছাত্র সংগঠনের নয়, এটা সবার জন্য। আমার ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্যকেও হলে তুলতে পারিনি। হলগুলো সরকারি ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। সেজন্য আমরা গঠনতন্ত্রে একটা সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছি। আর তা হলো, ভোট কেন্দ্রগুলো হলে হলে না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে করা। হলে যে একটা চাপ থাকে, একাডেমিক ভবনে করলে সেই চাপ থাকবে না। সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। আর শতকরা ৬৫ ভাগ ছাত্র হলের বাইরে থাকেন।”

তবে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুর উপরে চাই নির্বাচনটা মার্চের মধ্যে হোক। অনেক দিন পর একটা সুযোগ এসেছে ডাকসু নির্বাচনের।”

সহবস্থানের প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেন বলছেন, ‘‘এটা নিয়ে কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে আলাদা কথা। কিন্তু ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রার্থী ও ভোটার হবেন। এ ব্যাপারেও কোনো বাধা আসবে বলে আমি মনে করি না।”

আগামী সোমবার পর্যন্ত ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ডাকসুর নতুন গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হবে, তারপর ভোটার তালিকা। তবে ভোটার তালিকার প্রাথমিক কাজ আগেই হয়েছে। গত অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি তালিকা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের সঙ্গে সংযুক্ত ও আবাসিক মিলিয়ে মোট ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০৯ জন নারী শিক্ষার্থী ও ২৩ হাজার ৯৮৪ জন পুরুষ শিক্ষার্থী। এটা ধরেই ভোটার তালিকা তৈরি সহজেই কম সময়ে করা যাবে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা মনে করেন মার্চের মাঝামাঝিই নির্বাচন সম্ভব। তাই ফেব্রুয়ারিতেই ডাকসুর তফসিল চাইছে অনেক ছাত্র সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজাজামান বলেন, ‘‘মার্চের মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের শৃঙ্খলা কমিটিতেও মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া আছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ভোটার তালিকার জন্য হলভিত্তিক ছাত্রদের ডাটাবেজের কাজ চলছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকও করছি।”

ক্যাম্পাসে সহাবস্থান প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের প্রভোস্ট কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রভোস্টরা বলেছেন হলগুলোতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত। এখানে সবাই ক্লাস করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। সহাবস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”

সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জয়ী হয় ছাত্রদলের প্যানেল। আমান উল্লাহ আমান ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) এবং খায়রুল কবির খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগের বছর ১৯৮৯ সালেও ডাকসু নির্বাচন হয়। আর সেই নির্বাচনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ভিপি এবং মুশতাক আহমেদ জিএস নির্বাচিত হন। এই প্যানেলটি ছিল ছাত্রলীগসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি যৌথ প্যানেল। ১৯৭১ সালের পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাত বার।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

Similar Posts

error: Content is protected !!