আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আবাসিক দালানের তৃতীয় তলায় আগুন লেগেছে। ভদ্রমহিলা নিজে যেমন বাঁচতে চিৎকার করছেন, তার চেয়েও বেশি আকুতি করছিলেন মাত্র ৩ বছরের ছেলেকে বাঁচাতে। তখন আগুনের ধোঁয়া তাকে তাড়া করছে। বাঁচার আকুতিও বেড়ে চলছে। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারের শব্দে পাশের দালানের নিচে দোকানে কর্মরত সেলসম্যান ছুটে এলেন। তাকে দেখে ছেলেকে দ্বিতীয় তলা থেকে ছুঁড়ে দিলেন মা। সেলসম্যান শিশুটিকে কোলে নিয়ে প্রাণে বাঁচালেন।
গল্পের মতো এমন ঘটনা ঘটেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান শহরে। এই ঘটনায় নায়ক বনে গেছেন সেই সেলসম্যান, যিনি একজন বাংলাদেশি। তার নাম ফারুক, বাড়ি চট্টগ্রামে। এ ঘটনায় আরব আমিরাতের আজমান সিভিল ডিফেন্স ফারুককে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার টাকা, একটি সম্মাননা সনদ ও পদক দিয়ে সম্মানিত করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশি ফারুক ইসলাম হয়ে ওঠেন টক অব দি আমিরাত! একজন বাংলাদেশি হিসেবে ফারুক ইসলামের এমন মানবিক কাজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রবাসীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি প্রতিদিনের মতো মুদির দোকানে কাজ করছিলেন চট্টগ্রামের রাউজানের ফারুক ইসলাম। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় বাইরে ধোঁয়া দেখে তিনি দোকানের পাশের ভবনের দিকে তাকান। দেখতে পান ভবনটিতে আগুন লেগেছে এবং জানালার পাশে এক নারী ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন। তখন ফারুক এগিয়ে যান। এ সময় ৩ বছরের ছেলেকে বাঁচাতে নিরুপায় মা ভবনের ২ তলা থেকে নিচের দিকে ছুঁড়ে দিলে ফারুক ধরে ফেলেন। পরে ওই নারী নিজেও ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। তবে তিনি আহত হয়ে বর্তমানে শেখ খালিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় আরব আমিরাতের প্রভাবশালী সবক’টি পত্রিকা গুরুত্ব দিয়ে খবর ছেপেছে। ১৫ জানুয়ারি আজমান সিভিল ডিফেন্স ফারুককে পুরস্কৃত করে নগদ অর্থ ও সনদ প্রদান করে।
৫৭ বছরের বয়সী ফারুকের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে আছে দেশে। ছেলে সপ্তম শ্রেণি আর মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ফারুকের বীরত্বপূর্ণ এমন কাজে দেশে থাকা তার পরিবারের সবাই গর্বিত। ফারুক ইসলাম ১৯৯৭ সালে প্রথম আমিরাতে যান। নানা সময়ে নানা পেশায় কাজ করেছেন তিনি।
সূত্র : সমকাল, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯