শেখ উবাইদুল হক ।।
নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় হতদরিদ্র অসহায় সরলমনা মানুষের সরলতার সুযোগে বিভিন্ন লোভনীয় আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সময়ের সাথে সাথে প্রতারণার ধরনও বদলে নেয় সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুল ইসলাম নামের প্রতারক এক ব্যক্তি। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘটিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক দুষ্কর্ম। কে এই নুরুল ইসলাম?
খবর নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুল ইসলাম নিকলী উপজেলার মাইজহাটি গ্রামের মো: হযরত আলীর ছেলে। তার বাবা কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে কর্মরত। মূলত ভুয়া এই সাংবাদিক একজন বখাটে। পুলিশ লাইনে কর্মরত বাবার নামে এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ লোকজনকে ভয় দেখিয়ে নানারকম ফায়দা হাসিল করা তার একমাত্র কাজ।
ভুক্তভোগী একজনের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরনির্বাচনে আনসারের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মোট ১৪০০০ টাকা হাতিয়েছে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুল ইসলাম। অভিযোগকারী ললিতা ও গৌরি এই প্রতিনিধিকে জানান, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর ও ভৈরব পৌর নির্বাচনে আনসারের দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে মর্মে আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ করে টাকা নেয়। স্বল্পকালীন এই চাকরির পারিশ্রমিক দেয়া হবে জনপ্রতি ২৩৫০ টাকা। চরম দারিদ্র্যের মাঝে থাকা ভুক্তভোগীরা এই আশ্বাসে অন্তত কিছুদিন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড়ের স্বপ্ন বুনেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার পরও চাকরির ডাক না পেয়ে নুরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে সে ও পরিবারের লোকজন মিলে অভিযোগকারীদের তাড়িয়ে দেয়।
মকবুল হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের খরচ যোগাতে খুব হিমশিম খাচ্ছেন। এমন দুরবস্থায় নুরুল ইসলামের কাছ থেকে আনসারের ডিউটির আশ্বাস পেয়ে তাকে ৫০০ টাকা দিই; সেটাও যোগাড় করতে হয়েছে কর্জ বাবদ একজন পড়শির কাছ থেকে। আশা ছিল, ডিউটি শেষে প্রতিশ্রুত প্রায় আড়াই হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেলে এ থেকে ধার শোধ করার পাশাপাশি পরিবারের ক’বেলার খাবার সংগ্রহে সহায়ক হবে। মকবুল আরো জানান, প্রতারিত হওয়ার পর বিভিন্নজনের কাছে শুনতে পাই নুরুল ইসলাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল লোকদের কাছ থেকে আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল, স্যানেটারি ল্যাট্রিন, এনজিওর ঘর, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেয়ার নামে অনেক টাকা হাতিয়েছে। স্থানীয়ভাবে দরবার করে টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সুবিচারের আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিকলী থানা ওসি মো. মকবুল হোসেন মোল্লা জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুল ইসলামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।