আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
কবি আল মাহমুদ মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবিকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ওই দিন ইবনে সিনা হাসপাতালে তাঁকে প্রথমে সিসিইউতে ও পরে আইসিইউতে নেয়া হয়। শুক্রবার তাকে “লাইফ সাপোর্ট” দেয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে আল মাহমুদের প্রথম কবিতার বই “লোক লোকান্তর” প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয়, “কালের কলস” ও “সোনালী কাবিন”। কবিতা ছাড়াও আল মাহমুদ লিখেছেন উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও আত্মজীবনী।
সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার ও কলকাতার ভানুসিংহ সম্মাননা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বাংলা কবিতার অন্যতম শক্তিশালী কবি আল মাহমুদ শুক্রবার মারা যাওয়ার ইচ্ছার কথা নিজেরই এক কবিতায় উল্লেখ করেছিলেন। সেই কাঙ্খিত দিনেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। কবির মহাপ্রয়াণে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতির মেঘলাভোর নামের ওই কবিতাটি তুলে ধরা হলো-
কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক, মেনে নেবো: এ আমার ঈদ।
ফেলে যাচ্ছি খড়কুটো, পরিধেয়, আহার, মৈথুন –
নিরুপায় কিছু নাম, কিছু স্মৃতি, কিংবা কিছু নয়;
অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে জমে আছে শোকের লেগুন;
কার হাত ভাঙে চুড়ি? কে ফোঁপায়? পৃথিবী, নিশ্চয়।
স্মৃতির মেঘলাভোরে শেষ ডাক ডাকছে ডাহুক,
অদৃশ্য আত্মার তরী কোন ঘাটে ভিড়ল কোথায়?
কেন দোলে হৃদপিণ্ড, আমার কি ভয়ের অসুখ?
নাকি সেই শিহরণ পুলকিত মাস্তুল দোলায় !
আমার যাওয়ার কালে খোলা থাক জানালা দুয়ার
যদি হয় ভোরবেলা স্বপ্নাচ্ছন্ন শুভ শুক্রবার।
(স্মৃতির মেঘলাভোর, আল মাহমুদ)