আজিজুল হক বিপুল, মহাস্থান (বগুড়া) ।।
সড়ক-মহাসড়কে বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত অপসারণের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও বগুড়ার মহাস্থান-শিবগঞ্জ অঞ্চলিক রোডের মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসরণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ। এর মধ্যে মিনা ফটো স্টুডিও-এর দক্ষিণ পাশে কাপড় মার্কেটের সামনে রাস্তার মাঝে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও আজাদ ম্যানশন-এর সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটি বেশি বিপজ্জনক।
স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী শিপনকে জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় হযরত শাহ্ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ:)-এর মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যানবাহন নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও দর্শনার্থীরা এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। কিন্তু রাস্তার মধ্যে স্থাপন করা বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে শতশত যানবাহন চালক ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু দুর্ভোগই নয় এসব বিপজ্জনক খুঁটি দ্রুত অপসারণ না করলে যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা। কিংবা ওই ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটির সাথে গাড়ির সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তারা জানান।
এছাড়াও ওই রাস্তা মহাস্থান মাজার, উপজেলার সরকারি ডাকের প্রসিদ্ধ মহাস্থান হাট, মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজ, সরকারি প্রাইমারি ও উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ সুলতান আলিম মাদ্রসা, জাদুঘর, রায়নগর মসলা গবেষণা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলার প্রতিটি সরকারি দপ্তরে যেতে বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি সংযুক্ত প্রধান এই রাস্তাটিই একমাত্র ভরসা।
উল্লেখ্য, সড়ক-মহাসড়কে বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন যে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ আদেশ বাস্তবায়নে বিবাদিদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
পরে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, গত শনিবার রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় আসার পথে নরসিংদীর শিবপুরে রাস্তার মধ্যে একটি খুঁটি দেখে ফেসবুকে লাইভ করি। সেই ভিডিও দেখে অনেকেই দেশের বিভিন্ন সড়কে থাকা বিপজ্জনক খুঁটির ছবি ফেসবুকে পাঠান। সেসব ছবি যুক্ত করেই বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বৈদ্যুতিক ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিসহ সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি দ্রুত আপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুততম সময় বলতে আদালত বলেছে, তা যেন ৬০ দিনের বেশি না হয়। এছাড়া আদালত রুলও জারি করেছেন।
রুলে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সব ধরনের বিপজ্জনক খুঁটি চিহ্নিত করে অপসারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদিদের এ রুলের জবাব দিতেও বলা হয়। হাইকোর্টের এই আদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে মহাস্থানের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল মহাস্থানের শিবগঞ্জ রোডের মাজার গেট থেকে শুরু করে কলেজ গেট পর্যন্ত প্রায় ৫টি রাস্তার মধ্যে থাকা বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত উপসারণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর হস্তক্ষেপ কামনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।