আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের পাশাপাশি দেশে স্বতন্ত্র গোয়েন্দা সংস্থাও রয়েছে একাধিক। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি সংস্থা হচ্ছে ডিজিএফআই ও এনএসআই। সংস্থা দুটি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে পুলিশের অধীনে একাধিক গোয়েন্দা ইউনিট। যদিও অনেকেই এগুলোকেও স্বতন্ত্র গোয়েন্দা সংস্থা বলে মনে করেন। তবে ডিজিএফআই ও এনএসআই ছাড়া সবগুলোই পুলিশ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোটা দাগে কিছু কাজ একই রকম হলেও সবগুলো গোয়েন্দা ইউনিটেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কাজ।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, “পুলিশের আওতাধীন গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর সুনির্দিষ্ট করে কাজ ভাগ করা আছে। তাদের কাজের পরিধি ঠিক করে দেয়া আছে। অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী ইউনিটগুলো তাদের নিজ নিজ কাজ করে থাকে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ দুটি গোয়েন্দা সংস্থা হচ্ছে সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)। ডিজিএফআই সাধারণত প্রতিরক্ষা বিষয়ে ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। ডিজিএফআইয়ের অধীনেই ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মতো একাধিক ইউনিট রয়েছে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাও (এনএসআই) দেশের সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এছাড়া বৈদেশিক গোয়েন্দা কার্যক্রমও পলিচালনা করে থাকে এনএসআই।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অধীনে সবচেয়ে বেশি গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে পুলিশের বিশেষ শাখা বা এসবি। এসবি সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসবির একটি বড় ইউনিট হলো সিটি-এসবি। এটির কাজ হলো শুধু রাজধানীকেন্দ্রীক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলাতেই ডিএসবি নামে এসবির একটি করে শাখা রয়েছে। পুলিশ সুপারের অধীনে থেকেই কাজ করে এটি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বিশেষ ইউনিট হিসেবে গুরুতর অপরাধগুলোর তদন্ত করে থাকে তারা। চাঞ্চল্যকর খুন-রাহাজানির ঘটনার তদন্ত ছাড়াও জঙ্গিবাদ, জঙ্গি অর্থায়ন, মানি লন্ডারিংসহ অর্গানাইজড ক্রাইমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করে সিআইডি।
পুলিশের আরেকটি বড় ইউনিট হলো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান—র্যাব। র্যাবে সাধারণত পুলিশের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্যরাও প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে র্যাব। যে কোনো সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে থাকে তারা।
পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। এটি ঢাকা মহানগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য থানা পুলিশকে সহায়তা দেয়। এর পাশাপাশি মহানগর এলাকায় সংঘঠিত বড় বড় অপরাধের ঘটনার তদন্ত করে মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। বছরতিনেক আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অধীনেই গঠিত হয় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট—সিটিটিসি। মূলত জঙ্গিবাদ দমন ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এই ইউনিট। ইতোমধ্যে জঙ্গিবিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে অনেক সফলতা অর্জন করেছে সিটিটিসি। সিটিটিসি ছাড়াও সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কাজ করার জন্য অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিট নামে আরেকটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তারা এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে না পারলেও ভবিষ্যতে এটি শক্তিশালী ইউনিট হবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, “ঢাকা মহানগর পুলিশের অধীনে যেসব ইউনিট রয়েছে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি আগাম ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে।”
পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ইউনিট। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—এফবিআইয়ের আদলে গঠিত এই ইউনিট মূলত সূত্রবিহীন মামলাগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করে থাকে। এর বাইরে নৌ-পুলিশ দেশের নৌপথের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং শিল্প পুলিশ দেশের শিল্প এলাকাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন