আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কমান্ডো অভিযানে নিহত বিমান “ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী” মাহাদীর (২৩) বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে। গ্রামের সবাই তাকে পলাশ নামেই চিনতো। গ্রামের বাইরে পলাশ নিজেকে মাহাদী নামে পরিচয় দিতো।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) দুপুরের দিকে কথা হয় পলাশের (মাহাদী) বাবা মুদি দোকানি পিয়ার জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “পলাশ সোনারগাঁয়ের তাহেরপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। এরপর সে আর পড়াশোনা করেনি।”
পিয়ার জাহান আরও বলেন, “গত শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) ছেলে (পলাশ) আমাকে জানায় সে আর বাংলাদেশে থাকবে না। দুবাই চলে যাবে। এ কারণে সে আমার কাছে ৫০০ দিরহাম দাবি করে এয়ারপোর্টে দেখানোর জন্য। আমি সেই টাকা জোগাড় করে দেই।”
পিয়ার জাহানের দাবি, “পলাশ তাদের অবাধ্য সন্তান। এর আগেও বিদেশে যাওয়ার কথা বলে সে অনেক টাকা নষ্ট করেছে। যে কারণে ছেলের সঙ্গে তিনি ঠিকমতো কথা বলতেন না।”
পলাশের (মাহাদী) বাবা বলেন, “গত ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে নিয়ে পলাশ বাসায় আসে। তখন সে জানায় সিমলাকে নিয়ে এলাকায় বেড়াতে এসেছে। কিন্তু দেড় থেকে দুই মাস পর লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি তাদের বিয়ে হয়েছে। এর ঠিক দেড় থেকে দুই মাস পরে পলাশ আবারও সিমলাকে নিয়ে বাড়ি আসে। তখন জানায় সিমলাকে সে বিয়ে করেছে। প্রথমে না মানলেও পরবর্তীতে বিয়ে মেনে নেই এবং বউকে (সিমলা) বলি ছেলেকে ভালো করে তুলতে। এরপর পলাশের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হতো না।”
পিয়ার জাহান বলেন, “এর আগে পলাশ আরেকটি বিয়ে করে বগুড়ায়। তার একটি বাচ্চাও আছে। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এছাড়া, এলাকায় নারী কেলেঙ্কারির একটি ঘটনায় মামলাও হয়েছিল পলাশের নামে। সেই মামলায় ২০ দিন জেল খেটে সে জামিন পেয়েছিল।”
তিনি বলেন, “গতরাত একটার দিকে সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল আমাদের বাসায় আসে এবং বাড়ি তল্লাশি করে। পরে আমি ও আমার স্ত্রীকে স্থানীয় এক মুরুব্বির জিম্মায় রেখে যায় পুলিশ।”
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পলাশ ছোট। একমাত্র ছেলে হওয়ায় যা চাইতো তাই দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকে পলাশ অবাধ্য সন্তান ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার বাবা।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বলা হয়, ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই বিমানটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করে। ফ্লাইটে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু ছিলেন। পরে কমান্ডো অভিযানে সন্দেহভাজন বিমান “ছিনতাইকারী” মাহাদী নিহত হয়। বিমানে থাকা যাত্রীরা অভিযানের আগেই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন