আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
“হাতের মুঠোয় খতিয়ান”- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ভূমির আরএস খতিয়ান অনলাইনে অবমুক্ত করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আরএস খতিয়ান অনলাইনে অবমুক্তকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। অনলাইনে এখন ঘরে বসেই মাত্র ২ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই আরএস খতিয়ান পাওয়া যাবে বলে জানান ভূমিমন্ত্রী।
আরএস খতিয়ানপ্রাপ্তির ফলে জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, এতে সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মামলার ভোগান্তি এবং মধ্য-স্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও হ্রাস পাবে। এছাড়া নাগরিকের সময়, খরচ এবং যাতায়াত কমে যাবে। সেবাগ্রহীতারা খুব সহজেই এখন নির্দিষ্ট ফি দেয়ার মাধ্যমে আরএস খতিয়ান পেতে পারেন।
“আরএস খতিয়ান” অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত “জমি” নামক জাতীয় ভূমি-তথ্য ও সেবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (www.land.gov.bd) একটি অংশ। এছাড়া মোবাইল অ্যাপ, “rsk.land.gov.bd” এবং “drroffice.land.gov.bd” ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক ঘরে বসে অথবা নিকটস্থ যেকোনো ডিজিটাল সেন্টারে অথবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজের জমি সংক্রান্ত তথ্য দেখার সুযোগ পাবেন।
অনুষ্ঠানে প্রায় ৩২ হাজার জরিপকৃত মৌজার ১ কোটি ৪৬ লাখ আরএস খতিয়ান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বিশেষ উদ্যোগের অধীন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি মন্ত্রণালয়ের ৯০ দিনের কর্মসূচিরও একটি অংশ।
মন্ত্রী বলেন, দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সু-শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। ভূমি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন যেন টেকসই সেজন্যে আমরা বদ্ধপরিকর।
এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোতে কর্মরত গণকর্মচারীরা সম্পত্তির হিসেব জমা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনে কর্মরতারাও নিজ নিজ কালেক্টরেট অফিসে সম্পদের হিসেব দিয়েছেন। খুব শিগগিরই তা আপনারা তা জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, উপরের দিকে দুর্নীতি কমে আসলে নিচের দিকেও দুর্নীতি কমে আসবে। এখন কর্মচারীরা অনেক ভালোভাবে কাজ করছে। উপরের দিকে দুর্নীতি কমে এসেছে।
ভূমিসচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের অফিসের রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ান বা পর্চা দেয়া হয়। খতিয়ানের কপি প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, মধ্য-স্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস এবং ভূমি সংক্রান্ত সেবা আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করার জন্য অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে।
আরএস খতিয়ান পাওয়া যাবে যেভাবে
অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা বাছাই করতে হবে। খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর বা মালিকানা নাম বা পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে খতিয়ান খোঁজা যাবে। এছাড়া খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য অনলাইনে আবেদন, আবেদন নিষ্পত্তি বিষয়ে ট্র্যাকিং ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনিটরিং করার সুবিধা রয়েছে এই অনলাইন ব্যবস্থায়।
অনলাইনে খতিয়ানের কপি পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয় পরিচয়পত্র নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। নির্ধারিত তথ্য দেয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধের পর অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে চাইলে সরাসরি অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নেয়া যাবে।
সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর, ফোন নম্বর দিতে হবে। তথ্য প্রদানের পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য ফি দিতে হবে। ফি দেওয়ার পর সার্টিফাইড কপির জন্য নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, ট্রানজেকশন আইডি ও ডাকযোগে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা অফিস থেকে বা আবেদনকারীর প্রত্যাশিত ঠিকানায় ডাকযোগে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হবে।
অনুষ্ঠানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তসলীমুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা এবং এটুআই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাংলা নিউজ