হাটহাজারীতে ইটভাটা মালিকরা মানছে না পরিবেশ আইন

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানার পরেও পরিবেশ আইন মানছে না ইটভাটা মালিকরা। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কাঠ পোড়ানোর দায়ে গত জানুয়ারিতে কয়েকটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- হাটহাজারীর সুজানগর এলাকার শাহজালাল ব্রিকস, সোনালী ব্রিকস, ধলই ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারে শান্তিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘেষে সিরাজ ব্রিকস এবং সৌদিয়া ব্রিকস। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ইটভাটায় এখনো কাঠ পোড়ানো অব্যাহত রেখেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বিভাগকে ম্যানেজ করেই তারা কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের চরম ক্ষতি করছেন। শুধু তাই নয়, ইটভাটার এক মালিক বলেন, ন্যায়-অন্যায় আমরা বুঝি না জেলা প্রশাসকের এলিট ফান্ডে টাকা দিচ্ছি। এতে করে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মালিকরা ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে সামাজিক বনায়নের কাঠ ও বনসম্পদ। এমনকি লোকালয় থেকে ফলদ ও বনজ গাছ কমমূল্যে ক্রয় করে ইটভাটায় পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ইটভাটায় স্থাপন করা চিমনির কালো ধোঁয়ায় স্থানীয় পরিবেশ দূষিত হয়ে কৃষিজাত পণ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ইটভাটা সংলগ্ন বসতিগুলোতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার শাহজালাল ব্রিকস, ধলই ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজার লাগোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘেষে সিরাজ ব্রিকস ঘুরে দেখা গেছে, ভাটার আশপাশে কাঠের স্তুপ। কোথাও কয়লার দেখা মেলেনি। কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মাসে কাঠ পোড়ানোর দায়ে এই ভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও নিয়মিতভাবে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, প্রতি মৌসুমে এ ভাটায় প্রায় পাঁচ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়। স্থানীয় একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলা-বালুতে বাড়িঘরে থাকা দায়। ভাটার মালিকেরা অর্থশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

ধলই ইউনিয়নের শান্তিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগোয়া সিরাজ ব্রিকস নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, ধুলাবালি আর কালো ধোয়ায় আমাদের এলাকার মানুষ তো দূরের কথা গাছপালা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব কিছুই যেন ধুলাবালিতে ভরে যায়। শুধু তাই নয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরো চরম আকার ধারণ করেছে। শান্তিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ধুলাবালি আর কালো ধোয়ার জন্য ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছি না। ধুলাবালির কারণে বই, খাতা, স্কুলের পোশাক সম্পূর্ণ ভরে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কয়েক বছর বন্ধ ছিল এই ইটভাটটি। এ সময় আমরা খুবই ভাল পরিবেশে বসে পাঠদান দিয়েছি। তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আর এখন ধুলাবালির জন্য পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও এই সব ধুলাবালির মাঝে
নিজেরা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হচ্ছে। যেন কেউ নেই দেখার মত।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান বলেন, জরিমানা করার পরেও কয়েকটি ইটভাটায় আগের মতো কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। শিগগিরই আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Similar Posts

error: Content is protected !!