কবি মহিবুর রহিমের ৪৩তম জন্মদিন পালিত

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
কবি মহিবুর রহিম ৪৩-এ পা রাখলেন। হাওরের কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা এই কবি ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি কিশোরগন্জের নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ছাতিরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার কবির ৪৩তম জন্মদিন। গ্রামের স্কুলের সীমানা পেরিয়ে সর্বশেষ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রচুর বই পড়তেন। মূলত বই পড়ার আন্দোলনে যুক্ত হয়েই লেখালেখির অভ্যাস। ছাত্রজীবনেই তার লেখার প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে। তার লেখা কবিতা, ছড়া প্রকাশ পেতে থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। মহিবুর রহিম নব্বই দশকের একজন শক্তিমান কবি। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে সময় থেকে লেখালেখির জগতে বিখ্যাত লেখক গবেষকদের সান্নিধ্য লাভ করেন। এ যাবত তার মোট সাতটি কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে।

poet_mohibur_rahim
প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ “অতিরিক্ত চোখ” (২০০২), “হে অন্ধ তামস” (২০০৩), “অনাবাদি কবিতা” (২০০৪), “দুঃখগুলি অনাদির বীজপুত্র” (২০১০), “হৃদয়ে আমার কোনো মন্দা নেই” (২০১৫), শিশুদের জন্য ছড়াকাব্য “সবুজ শ্যামল মন” (২০১৫), “শিমুল রোদে রঙ্গিন দিন” (২০১৫) প্রভৃতি। মৌলিক সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি লোকসাহিত্যের গবেষণায় রত আছেন। কিশোরগন্জ, বি-বাড়িয়া কুমিল্লা এলাকার লোকসংগীত, ভাটি বাংলার হাওরের লোকসাহিত্য বিষয়ে গবেষণা করছেন। বাংলা একাডেমীর অধীন লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ কর্মসূচীর আওতায় বি-বাড়িয়ায় লোকসাহিত্য বিষয়ে কাজ করছেন। তিনি লোকসাহিত্যের কাজের জন্য “প্রঘ্ঙা শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক” ও “স্মৃতি ৫২” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবিতায় সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে রকি সাহিত্য পদক, ২০১৩ সালে মেঠোপথ সাহিত্য পদক এবং ২০১৪ সালে লাভ করেন শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক সম্মাননা। তার কবিতায় দেশপ্রেম, গ্রামীণ নিস্বর্গ, দ্রোহ, প্রেম সবই এঁকেছেন খাঁটি শিল্পীর মতো। দেশে দেশে যুদ্ধ, হত্যা, সহিংসতার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিবাদ করেছেন পূর্বসূরী কবি নজরুলের মতোই।
তার কাব্য প্রতিভা ও কবিতার প্রশংসা করেছেন বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। কবি আল মাহমুদ তার কবিতার বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, “কবি মহিবুর রহিমের ছড়া কবিতার বই পাণ্ডুলিপি আমি শোনলাম, স্পর্শ করলাম দেখলাম। এই কবির কবিত্বশক্তি দ্রুত সঞ্চারমান। আমার ধারণা কবি মহিবুর রহিম এ কালের ছড়া কবিতায় বিশেষ অবদান রাখবেন। বই প্রকাশিত হলে একজন কবিকে ভালো করে সনাক্ত করা যায়। আমি মহিবুরকে আগে থেকেই চিনি এবং জানি বলেই সাহস করে বলতে পারি, তিনি আমাদের ভবিষ্যতের কবি প্রতিভা। তার রচনা তারুণ্যে উজ্জ্বল, আনন্দে স্বতস্ফূর্ততায় গতিময়। আমি এই কবির সাফল্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকব। আমার ধারণা মহান আল্লাহ তার সাহিত্যের গতিময় তাকে নদীর মতো বহমান রাখবেন”। বর্তমানে পেশাগত কাজে এই কবি বি-বাড়িয়ার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগীয় প্রধান। এর আগে তিনি নিকলী মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ ডিগ্রী কলেজেও কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা মরহুম আমজাদ হোসেন ছিলেন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী। মা কমলা খাতুন গৃহিণী। তার স্ত্রী সরকারি চাকরিরত। তাদের তিন পুত্র সন্তান রয়েছে।
তিনি ভাটি অঞ্চলের গর্ব ও অহংকারের প্রতিক। নিকলীর এই সন্তান তার লেখনি শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন নিরন্তর। ৪৩তম জন্ম দিনে “আমাদের নিকলীর” পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!