পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিক তুলা চাষ : ধারাবাহিক লোকসানে চাষি

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা গ্রামের ইসলাম মিয়া। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে তার বাড়ি। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে তুলা চাষে আগ্রহী হন তিনি। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ২০১০ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ৩০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করেন। এতে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তিনি বেশ লাভবান হন। এতে তুলা চাষের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। পরের বছর আবারও তুলা চাষ করেন। সে বছর উৎপাদন ভালো না হওয়ায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয় তাকে। এ লোকসান পুষিয়ে নিতে পরের বছর আবারও তুলা চাষ করেন। কিন্তু আবারও লোকসান গুনতে হয় তাকে। লোকসান পুষিয়ে নিতে এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে আট বছর ধরে তুলা চাষ করে আসছেন। আর লোকসান গুনছেন। এবারও তাকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, তুলার বীজ বপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় সাত মাস। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করতে হয়। দুই থেকে তিন মাস পর তুলার ফলন আসা শুরু করে। এর প্রায় মাস দেড়েক পর তুলা উত্তোলনের উপযোগী হয়। একটি গাছ থেকে পর্যায়ক্রমে তিনবার তুলা উত্তোলন করা যায়।

তুলা চাষি ইসলাম মিয়া জানান, এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। জমি ভাড়া, বীজ বপন, নিড়ানি, সার, কীটনাশক ও তুলা উত্তোলনে শ্রমিক খরচ বাবদ এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। ৩০ বিঘা জমি থেকে ২শ’ মণ তুলা পাওয়ার কথা থাকলেও ফলন হয়েছে মাত্র ১৩০ মণ। যা তুলা উন্নয়ন বোর্ড নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করলে সকল খরচ মিটিয়ে এবারও তাকে লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি জানান।

কেন বারবার লোকসানে পড়তে হচ্ছে জানতে চাইলে ইসলাম মিয়া বলেন, লাভের আশায় বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে তুলা চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ, তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, তুলার ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং সঠিক সময়ে ঋণ না দেয়ায় আমাকে এমন লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরো বলেন, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কথা ও কাজের কোনো মিল নেই। তারা সঠিক সময়ে ঋণ দেন না। তুলার ন্যায্যমূল্যও দেন না। বর্তমান বাজারে এক মণ তুলার মূল্য চার হাজার ছয়শ’ টাকা রয়েছে। কিন্তু তুলা উন্নয়ন বোর্ড এক মণ তুলার মূল্য দিচ্ছে দুই হাজার পাঁচশ’ টাকা। তাই তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কটন অফিসার নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ওপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তুলার মূল্য আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। এ বছর দুই হাজার পাঁচশ’ টাকা মণ দরে মূল্য দেয়া হয়েছে। ইসলাম মিয়াকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

Similar Posts

error: Content is protected !!