সন্ধান মিলল আসল মেসি ভক্তের

একটা নীল-সাদা ডোরাকাটা পলিথিনের ব্যাগের ওপর কালি দিয়ে লেখা ‘মেসি’। আর নিচে জার্সির নম্বরটাও দেওয়া—১০। আর্জেন্টিনার জার্সির আদলে পলিথিন কেটে বানানো মেসির ছোট্ট এক ভক্তের এই ছবি ইন্টারনেটে তোলপাড় তুলেছে গত কয়েক দিনে। কে এই শিশু, যে জীবনের কঠিন সময়েও আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে মেসির নামে! যার সৃষ্টিশীলতার কাছে কাছে পাত্তা পায়নি সত্যিকারের জার্সি না পাওয়ার হতাশা। সাধারণ একটা পলিথিনেই অসাধারণ এক আবেগের প্রকাশ!
এই শিশুর পরিচয় জানতে তাই হুমড়ি খেয়েই পড়েছিল পুরো ফুটবল দুনিয়া। প্রথমে শোনা গেল, শিশুটি ইরাকের। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ডোহুকের অধিবাসী সে। কুর্দিস্তান টিভি তো ডোহুকে হোমিন নামের এক বালককে খুঁজেও বের করেছিল। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে হোমিনের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে জানানো হলো এই সেই ‘মেসি ভক্ত’।

মুর্তজার ছবির সাথে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি
মুর্তজার ছবির সাথে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি

কিন্তু সে খবর তাজা থাকতে থাকতেই আসল সেই শিশুকে খুঁজে পাওয়া গেল। আজিম আহমাদি নামক অস্ট্রেলিয়া নিবাসী এক আফগান খোঁজ দিলেন সেই শিশুর। এই ছবি নাকি তাঁর ভাতিজা মুর্তজা আহমাদির। আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে বসবাস মেসির সবচেয়ে বড় ভক্তের। বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিবিসি মুর্তজার বাবা আরিফ আহমাদির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও নিশ্চিত করলেন, এই ছবি তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলের। আফগানিস্তানের গজনি অঞ্চলের জাঘোরি জেলার দরিদ্র কৃষক তিনি। ছেলের প্রবল ফুটবল প্রীতি দেখেও জার্সি কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তখন মুর্তজা ও তার ভাইয়েরা মিলে বানিয়ে নেয় প্লাস্টিকের ওই জার্সি।
জার্সি গায়ে মুর্তজার ছবিটা তোলে তার বড় ভাই হুমায়ুন। ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করে সে। তারপরই ধীরে ধীরে এই ছবি ছড়িয়ে পরে সবদিকে। এই ছবিটিই আবেগাপ্লুত করেছে ফুটবল আগ্রহী মানুষদের। এই একটি ছবিই যে অনেক গল্প বলে দিচ্ছে—কীভাবে অভাবের মধ্যেও সবচেয়ে সুন্দর খেলাটি একটি শিশুর শৈশবকে রাঙিয়ে দিচ্ছে। হোক না অভাব, হোক না যুদ্ধের প্রভাব, তবু তো ফুটবল শিশুটির প্রায় সব আনন্দ কেড়ে নেওয়া শৈশবে অল্প হলেও আনন্দের খোরাক জোগাচ্ছে।
মুর্তজা অবশ্য জানে সে এখন কতটা বিখ্যাত। তার ছবি নিয়ে সবার এমন আলোচনায় সে প্রচণ্ড খুশি। মুর্তজার এখন আশা, তাঁকে মেসির সঙ্গে দেখা করানোর সুযোগ করে দেওয়া হোক। মেসির সবচেয়ে বড় ভক্তের সঙ্গে মেসিকে দেখা করানোর চেষ্টা করা যেতেই পারে!
সূত্র: বিবিসি, প্রথম আলো

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!