আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
দেশের রাজধানী ঢাকা শহর দেখার ভীষণ আকর্ষণ আর ঘুরে বেড়ানোর নেশার টান ভয়ঙ্কর মাদকের মতো বাসা বেঁধেছিল জুনায়েদ ও আরিফের মনে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এ দুই শিক্ষার্থী বন্ধু তাই একদিন তাদের পরিবারের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাড়ি জমায় রাজধানী শহর ঢাকায়।
এ ঘটনার পর অনেক খোঁজাখুজি করেও তাদের না পেয়ে কেঁপে ওঠে অভিভাবক ও স্বজনদের মন। একই দিন একই সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা শেষ পর্যন্ত ১৩ মার্চ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ দুই শিশুর ছবিসহ সারা দেশের সব পুলিশের কাছে পাঠানো হয় বিশেষ বার্তা। কিন্তু কিছুতেই হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না তাদের।
এলাকায় মানবপাচারকারী চক্রের তৎপরতা থাকায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের দশপাখি গ্রামের এ দুই নিখোঁজ শিশুর অভিভাবক-স্বজন, স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। অবশেষে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘটনার ৩৩ দিন পর গত রোববার (৭ এপ্রিল ২০১৯) রাতে নিজ নিজ বাড়িতে হাজির হয় এ দুই নিখোঁজ শিশু। আনন্দ ও বেদনার জলে ভাসে অভিভাবক, স্বজন ও এলাকাবাসী। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের দুঃসাহসিক গল্পের কথা জানায়।
জানায়, ঢাকা শহর দেখতে তারা ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার দিকে দুই বন্ধু একসঙ্গে কটিয়াদী উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ডে এসে একটি বাসে চড়ে ভৈরব যায়। তারপর হেঁটে যায় ভৈরব রেলওয়ে জংশনে। সেখানে গিয়ে একটি অপেক্ষমাণ ঢাকাগামী ট্রেনে চড়ে মধ্যরাতে পৌঁছে যায় কমলাপুর স্টেশনে। সেখানে ঘুরাঘুরি করার সময় আসিদ মিয়া নামে এক মধ্যবয়সী লোক তাদের নিয়ে যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার কবুতর ও পাখির খাঁচা তৈরির দোকানে। সে দোকানে নিয়ে বাঁশের খাঁচা তৈরির কাজ দেয় তাদের। মিলে যায় থাকা খাওয়া ও টু-পাইস ইনকামের পথ। বন্ধের দিনগুলোতে সে শ্রমঘামে অর্জিত ঢাকায় ঘুরে বেড়ায় ঢাকার সব দর্শনীয় স্থান।
কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের দশপাখি গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. অয়েজ উদ্দিনের শিশুপুত্র পূর্বচর পাড়াতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ (১৩) এবং তার মাদ্রাসায় একই শ্রেণিতে পড়ুয়া বন্ধু একই গ্রামের দরিদ্র কৃষক মূসা মিয়ার শিশুপুত্র মো. আরিফ (১৩)। ডানপিটে দুই শিশুর অভিভাবক ও স্বজনদের পিলা কাঁপানো এই দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার সীমান্তবর্তী ব্রহ্মপুত্র ও পারেনি আড়িয়ালখাঁ নদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত লোহাজুরি ইউনিয়নে বহুদিন ধরে মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। ওই চক্রটি অভাব-অনটনের সুযোগ নিয়ে ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ দেয়ার কথা বলে অভিভাবকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই লোহাজুরি ইউনিয়নের খাদিজা (১৪) ও বিউটি (১৫) নামে দুই কিশোরীকে নিয়ে যায়।
কিন্তু এ ঘটনার একদিন পর ৩১ জুলাই ভারতে পাচারকালে বিজিবির টহল দল যশোরের বেনাপোল থেকে পাচারকারীকে আটকসহ এ দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তখন কটিয়াদী মডেল থানায় অপহরণ মামলাও রুজু হয়। পরে পুলিশ এ মামলায় বেনাপোল থেকে পাচারকারী আটকসহ দুই কিশোরীকে উদ্ধার দেখায়।
এ ব্যাপারে কথা হলে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিল এ ডানপিটে দুই শিশু। থানায় জিডি হওয়ার পর তাদের উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েও তাদের খোঁজ মিলছিল না। এ জন্য আমরাও খুব টেনশনে ছিলাম।
তিনি বলেন, এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করা উচিত নয়, এতে অপহরণের আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও নানা বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন থাকা উচিত।
সূত্র : যুগান্তর