আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
চিকিৎসক-সংকটে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যা এতটাই প্রকট যে প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অবেদনবিদ ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় আট বছর ধরে এখানে প্রসূতি অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে এসে চিকিৎসকেরা থাকতে চান না। কয়েক দিন আগে এখানে দুজন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও তারা নিজ চেষ্টায় বদলি হয়ে গেছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান, চিকিৎসা কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও সহকারী সার্জন আবদুল আল সাফি এখানে কর্মরত আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে ১৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কর্মরত আছেন চারজন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অপর তিনজনের মধ্যে পালা করে একজন চিকিৎসক ছুটি কাটান। নার্সের আটটি পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য। অবেদনবিদ মোজাম্মেল হোসেন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সেলিনা হক ২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসে বদলি হয়ে যাওয়ার পর এখানে জরুরি প্রসূতিসেবা (ইওসি) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে এখানে ওই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ উপজেলা থেকে প্রতিবছর তিন শতাধিক রোগীকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের দরজা, জানালাসহ মূল ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং পলেস্তারা খসে পড়ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এক্স-রে মেশিন থাকলেও পাঁচ বছর ধরে টেকনিশিয়ান না থাকায় এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ডেন্টাল চেয়ার ও যন্ত্রপাতি থাকলেও চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় এটি কোনো কাজে আসছে না। মলমূত্র ও রক্ত পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার ও সরঞ্জাম আছে। কিন্তু ১০ বছর ধরে টেকনিশিয়ানের পদ শূন্য থাকায় এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এখানে জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় রাতে জরুরি বিভাগে হারিকেন ও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। দুজন চিকিৎসক ১৫০ জন রোগীকে সেবা দিতে পারেন। বাকি ২০০ জন চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, চিকিৎসক-সংকটসহ নানা সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬