দুধের খামার করে লাভ করতে হলে গাভীর সঠিক পরিচর্যা করতে হয়। নিয়মিত খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা,গাভীকে সুষম খাবার দেয়া, অসুস্থ হওয়া থেকে রার জন্য প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেয়া জরুরি। কোনো কারণে গাভী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দ্রুত চিকিৎসা দেয়াও জরুরি। এ বিষয়গুলো মোটামুটি সবাই জানেন। খামার ব্যবস্থাপনার এই দিকগুলো খেয়াল রাখলে গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, বাড়বে দুধের উৎপাদন।
সেই সাথে সামান্য একটু বাড়তি পরিচর্যা খামারে দুধের উৎপাদন আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। গরু যেহেতু একটা জীব তাই তার দৈহিক চাহিদার পাশাপাশি অনুভূতিগত কিছু চাহিদাও রয়েছে। গরুর গায়ে হাত বুলিয়ে একটু আদর করলে, নাম ধরে ডাক দিলে গরু ভালো বোধ করে। আরো শান্ত এবং অনুগত হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এগুলো করে কিন্তু গাভীর দুধ দেয়ার ক্ষমতা বাড়ানো যায়। দুধের খামারে লাভ আসার জন্য এটা খুবই জরুরি। ব্যাপারটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ডেইরি বিজ্ঞান কিন্তু এমনটিই বলছে। সম্প্রতি একাডেমিক জার্নাল এনথ্রোজোস-এ নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এগ্রিকালচার, ফুড অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্টের গবেষক ড.ক্যাথেরিন ডগলাস এবং পিটার রলিনসন ৫১৮টি দুগ্ধ খামারে গবেষণা চালিয়ে দেখেন, যেসব খামারে গাভীর পৃথক পৃথকভাবে যত্ন নেয়া হয়, নাম ধরে ডাকা হয়, গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করা হয় সেসব খামারে গাভীর দুধ উৎপাদন অন্যান্য খামারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। খামারির আচরণ গাভীর দুধ উৎপাদনে কোনো ভূমিকা রাখে কি না সে বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা দেখেন, যেসব গাভীকে নাম ধরে ডাকা হয়, তাদের দুধের উৎপাদন অন্যান্য গাভীর চেয়ে বছরে প্রায় ২৫৮ লিটার বেশি।
ড. ডগলাস বলেছেন, এ গবেষণায় যে ফলাফল তা হয়তো অনেক খামারি অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন, তবে তা এখন প্রমাণিত সত্য। সুতরাং আপনারা যারা লাভজনক দুধের খামারের কথা ভাবছেন, তারা নিজ নিজ খামারের গাভীগুলোর দিকে বাড়তি একটু মনোযোগ দিন, নাম ধরে ডাকুন। গায়ে হাত বুলিয়ে দিন। এতে গাভীর সাথে আন্তরিকতা বাড়বে। এ বাড়তি পরিচর্যায় কোনো খরচ হবে না, তবে দুধের উৎপাদন বাড়বে উল্লেখযোগ্যভাবে।
লেখক : ডা. হাসান মুহাম্মদ মিনহাজে আউয়াল
সূত্র : নয়া দিগন্ত