হুমায়ুন কবির, পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে “নেক ব্লাস্টে” আক্রান্ত হয়েছে বোরো ফসল। এতে করে কৃষকদের বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের হাসি কেড়ে নিয়েছে, কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদের। ধান ক্ষেতের কোনো এক অংশ থেকে শুরু হয় এই রোগের। এরপর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো জমিতে। অন্যদিকে যেসব ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট ছড়ায়নি সেসব ক্ষেতেও নিয়মিত স্প্রে করলেও কৃষকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
চারা রোপনের শুরুতে আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন কৃষকরা। কিন্তু বর্তমানে ধান পাকার মাঝামাঝি সময়ে বৈরি আবহাওয়া, ঝড়, শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় আতংকে দিন কাটছে চাষিদের। তার উপর ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধান ক্ষেতে শীষ আসার পরে নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে ধানের শীষ। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, মুখে নেই হাসির ঝিলিক।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ধান ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শত শত হেক্টর জমির ব্রী-২৮ ও ব্রী-২৬ জাতের ধান ক্ষেত নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ মরে গেছে। ধানের ক্ষেতগুলো দূর থেকে পাকা মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় ধানের শীষ মরে গেছে।
পাকুন্দিয়া পৌর সদরের মধ্য পাকুন্দিয়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া, আলম, রিপনসহ অনেকেই জানান, প্রতি একর জমি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে বর্গা নিয়ে ব্রী-২৮ জাতের ধান চাষ করেছি উচ্চ ফলনের আশায়। প্রতি একরে আমাদের খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ক্ষেতের পুরোটাই মরে গেছে। এখন এ মরা ধান গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। যদি গো-খাদ্য হিসেবে খড় সংগ্রহ করি তাহলেও প্রতি একরে খরচ হবে ১০-১৫ হাজার টাকা। টাকা ধারদেনা করে ধান আবাদ করেছিলাম এখন পথে বসতে হবে পরিবার নিয়ে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অফিসার মোঃ আব্দুস সামাদ জানান, বর্তমান মৌসুমে সারাদেশের মতো পাকুন্দিয়ায় নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। সকল জাতের ধানে এ রোগের আক্রমণ হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মূলত এ রোগের আক্রমণ হয়েছে। নেক ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষকদের মাঝে সাড়ে দশ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং আমাদের মাঠ কর্মীরা সব সময় মাঠে থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ক্ষেতে ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নেক ব্লাস্টে ধানের ক্ষতি হলেও উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। কারণ আমাদের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড ধানের আবাদ বেশি হয়েছে।