মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
হাটহাজারীর পৌরসভার আদর্শগ্রামে ইব্রাহিম চিশতী নামের এক ভণ্ডের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিল হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন। সোমবার (২৮ এপ্রিল ২০১৯) বিকালে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভণ্ডের আস্তানাটি গুঁড়িয়ে দেন মুহূর্তে। এসময় এলাকার কয়েকশত উৎসুক জনতা উপস্থিত ছিলেন। কোনো প্রকার বিশৃংখলা না ঘটতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন তৎপর।
এলাকাবাসীর একাধিক লোকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৮ বছর আগে এই গ্রামের বাসিন্দা ইবরাহীম চিশতী (প্রকাশ অনিল বড়ুয়া) মারা যায়। তাকে স্থানীয় কবরস্থানে কবর না দিতে তিনি অসিয়ত করে যাওয়ায় তার স্বয়ন কক্ষে দাফন করে। তার জানাযার নামাজে মাত্র ৯জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। বিগত ৬ বছর যাবৎ তার নামে রাতে নারী-পুরুষ বাৎসরিক ওরশ অনুষ্ঠান করে ঘরোয়াভাবে। সারারাত নাচ গানে অতিষ্ট পাশে বসবাসরত পরিবারগুলো। দীর্ঘ ৮ বছর অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে আসছে। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না তারা।
আগামী ৩ মে প্রকাশ্যে ওরশ করার জন্য অদুদিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবদুল ওহাব আল কাদেরীর নেতৃত্বে ওরশ উদযাপন করতে বিভিন্ন লিফলেট, পোস্টার ও টাকা উত্তোলনের রশিদ বই নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা উঠাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে মডেল থানার ওসির কাছে অভিযোগ করলে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এলাকাবাসীর মাধম্যে বিষয়টি অবগত করলে সোমবার বিকেলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের পরিস্থিতি দেখে দ্রুত ভণ্ড বাবার আস্তানাটি গুঁড়িয়ে দেয়।
তার ২ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে। পুত্র দু’জনেই সিএনজিচালক। তারা নাকি আস্তানার শাহজাদা দাবি করেন। প্রায় ৮ বছরের ভণ্ডামীর আস্তানাটটি গুঁড়িয়ে দেয়ায় এলাকায় থমথম পরিস্থিতি এখন শান্ত বললেই চলে।
অদুদিয়া মাদরাসার শিক্ষক ও এলাকার বিতর্কিত ব্যক্তি মুফতি আবদুল ওহাব আল কাদেরীর কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি কোনো মাজার না। কোনো পীরও না। তবে মনছুরাবাদ পীরের মুরিদ ছিলেন। তাই তার কবরকে দায়রাপাক হিসেবে তৈরি করা হলে আমি তার দায়িত্ব পালন করে আসছি তখন থেকে। এ ওরশের কার্যক্রমের সাথে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো না। কিন্তু এলাকার একাধিক ব্যক্তি আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেংকারির অভিযোগ করে বলেন, একজন নারীলোভী মৌলভী সমাজে ফেৎনার জন্য করতে নানারকম বিতর্কিত কাজ সৃষ্টি করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও রুহুল আমিন প্রতিবেদককে জানান, এ এলাকায় ভণ্ডামী করতে অলি-আওলিয়াদের বদনাম রটাতে ও মাজার বানিয়ে ধান্দা করতে মূলত তাদের এ পরিকল্পনা। কিন্তু এলাকার এত লোক থাকতে এ সব বিষয় আগে থেকে কেন বন্ধ করা হলো না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তখনি বন্ধ করলে আজ এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। তবে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে এলাকাবাসী এসব বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করে তা প্রতিহত করতে হবে।