হুমায়ুন কবির, নিজস্ব প্রতিনিধি ।।
রাজধানীর মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাস। কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে শাহিনুর আক্তার উরফে তানিয়া (২৪) ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করেন। সোমবার (৬ মে ২০১৯) বিকালে তিনি এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে উঠেন পিরিজপুর যাওয়ার জন্য।
পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। শাহিনুর বিকালে বাসে উঠার পর থেকে তার পিতা এবং ভাইদের সাথে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়। রাত ৮টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার পিতার সাথে ফোনে জানান, আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পৌছতে পারবেন। তার পিতা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন।
সাড়ে আটটার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌছলে তখনো তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়, বলেন আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌছতে। কিন্তু কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সমস্ত যাত্রী নেমে যায়। গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তার সাথের চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। রাত সাড়ে ৮টায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নীরব জায়গায় শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যার অভিযোগ নিহতের পরিবারের। ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে এগারটার দিকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে দুর্ঘটনার কথা বলে লাশ ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়।
হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে আনয়নকারীর নাম পাওয়া যায় আল আমিন, পিতা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর। এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময় সে পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌছায় তার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গভীর রাতে সংবাদ পায় শাহিনুরের লাশ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন জানায়, শাহিনুরের সাথে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসং এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল।
কটিয়াদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ড্রাইভার নূরুজ্জামান (৩৯) ও হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। শাহিনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাগ, কাপড় চোপড় পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় এবং সেখানেই লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) মঙ্গলবার ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের কোন ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ডিপ্লোমা নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা বিএমএ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ ওয়াহাব বাদল অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।