খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
ধান গাছের উচ্ছিষ্ট অংশে গজানো ধানই (ডেমী) এখন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর কৃষকদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে। শিলাবৃষ্টি আর চিটায় নষ্ট জমিতে গজানো ডেমীর আশাতীত ফলন ক্ষতিগ্রস্তদের এই ভরসার কারণ।
নিকলী উপজেলার পইতাইন্যা, চলিহাতী, আহাতী ও বড় হাওরসহ একাধিক হাওর ঘুরে দেখা যায়, কাটা জমি ও ধান না কেটে কৃষকের স্বত্ত্ব ছেড়ে দেয়া শত শত জমি জুড়ে লাল নিশান উড়ছে।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ২রা এপ্রিলে দুই দফা শিলাবৃষ্টিতে এইসব জমি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজস্ব শ্রমশক্তি সম্পন্ন কৃষকরা কিছু জমির ধান কাটে। প্রাপ্য ধান ও শ্রমিক মূল্যের অসঙ্গতির কারণে অধিকাংশ কৃষক জমির ধানের স্বত্ত্ব ছেড়ে দেয়। অতিক্রান্ত সময়ে এইসব জমি শুকিয়ে যায়। বৃষ্টির পানি পেয়ে কাটা ও আকাটা শুকনো ধানগাছের ভিতর থেকে নতুন শীষ বেরিয়ে আসছে। অধিকাংশ জমি পুনঃফসলে সবুজ। আবাদী জমির মতোই ফসল পাওয়ার সম্ভাবনা বিপর্যস্ত কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
উপজেলা সদরের আহাতী হাওরের কৃষক পুকুরপাড় গ্রামের ইব্রাহীম মিয়া ও মফিজ মিয়া জানান, শিলাবৃষ্টি আর শিলার কারণে বর্ণনাতীত ক্ষতি হয়েছে আমাদের। বেশিরভাগ কৃষক জমি কাটেইনি। ডেমীর ফলনে ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। তিনি আরও জানান, আগাম বন্যার কবলে না পড়লে প্রতি একরে ৩৫-৪৫ মণ পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে।
তরুণ কৃষক কামারহাটি গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ধান কেটে নেয়ার পর ডেমীর ধান গরীব কুড়ানীরা নিয়ে যেতো। এখনও তাই নিয়ম। কিন্তু এইবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নিরুপায় হয়ে লাল নিশান উড়িয়ে জমিগুলি নিজেদের দখলে রেখেছেন।
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুণ অর রশিদ জানান, এই রকম ধানকে মুড়ী ধান বলা হয়ে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে অল্প ইউরিয়া ছিটালে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়টি কৃষক এবং আমাদের কারুরই লক্ষ্যমাত্রা না থাকায় প্রাপ্য ফসলের তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে বিষয়টি মনিটরিংয়ে রেখেছি।