শেখ মোবারক হোসাইন সাদী, নিজস্ব প্রতিনিধি ।।
নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের ২৪ নং ধারীশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে। নির্মাণ ১৯৬৫ ও জাতীয়করণ হয় ১৯৭৩ সালে। উক্ত বিদ্যালয়ে ভবন রয়েছে ২টি। একটি নতুন ভবন ও অন্যটি ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবন। যেখানে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকগণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। ছোট্ট একটি কামরাকে শিক্ষক মিলনায়তন বা অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন সময় সেটির ছাদের পলেস্তারা বা ভেঙ্গে গিয়ে বড় ধরনের প্রাণহানির আশংকা করছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অভিভাবকগণও।
বিদ্যালয় ভবনের ঠিক সামনেই একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটির পাড় বা তীরে নেই কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী বা বেড়া। বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন ছাদ থেকে সিমেন্ট-বালির পলেস্তারা/ আস্তর ভেঙে মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীদের মাথায় পড়ে। যদি কোন কারণে একটু বড় ধরনের আস্তর পড়ে তাহলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। যখন তখন ধসে পড়তে পারে ভবনটিও।
পুকুরটির ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের মাঠ প্রায় অর্ধেক পুকুরে চলে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা অর্ধেক হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই পুকুরটি স্থানীয় প্রভাবশালী বিবি সাহেবের। তারা কেউ বাড়িতে না থাকায় এর কোনো খবরাখবর নেই। পুকুরের পাড় ভালো করে তৈরি করলে মাঠটি বেঁচে যাবে, সেই সাথে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা হবে পাশাপাশি বিদ্যালয়ের জায়গার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণের জন্য গত কয়েক বছর আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিগণ ভবন নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভবনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
আমাদের নিকলী ডটকম প্রতিনিধির সাথে কথা হয় নিকলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত)। তিনি জানান, এমপি মহোদয়ের সুপারিশ সহকারে দরখাস্তটি পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের আওতায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানো হয়। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির সংস্কার কাজের জন্য কিছু বরাদ্দ এসেছে। যা দিয়ে ভবনটি সংস্কার করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান, নিকলী উপজেলায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ আরও ৮-১০টি ভবনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এই বিদ্যালেয়ে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯৩। এর মধ্যে ছেলে রয়েছে ১০০ জন ও মেয়ে ৯৩ জন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইসনে আরা বলেন, “এই ভবনটির কোন ভিত্তি নেই। শুধু ইটের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণীকক্ষ না থাকায় আমরা একরকম বাধ্য হয়েই এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছি। আমরা সবসময় আতংকিত অবস্থায় থাকি।”
তিনি আরো বলেন, “গত কয়েক দিন আগেও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর উপর ছাদের অংশবিশেষ ভেঙ্গে পড়ে। ভাগ্য ভাল বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে যে কোনো সময় তা ঘটে যেতে পারে এমন আশঙ্কা সব সময়ই আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এ ভয়ে আমরা এখন বাহিরে ক্লাস করাচ্ছি। সামনে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আমার আগের প্রধান শিক্ষকও বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছেন, কোনো ফল হয়নি। আমিও অনেকবার আবেদন করেছি। তাই আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অন্তত শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে একটি টিন সেড হলেও নির্মাণের ব্যবস্থা নিন।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিমঝিম বলেন, “আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই ক্লাস নিচ্ছি। আমরা তো চাকরি করি তাই ক্লাস করাতেই হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশের হার ১০০%। সেই সাথে ঝরে পড়ার হার নেই বললেই চলে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের বিষয়ে কথা হয় ৩য় শ্রেণির ছাত্র প্রভাতের সাথে। সে জানায়, কোন একদিন ক্লাস করার সময় তার উপর ছাদের পলেস্তারা ভেংগে পড়েছিল। তাই তার মা-বাবা তাকে স্কুলে যেতে বারণ করেছে। একই শ্রেণীর ছাত্রী আফিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সে ভয়ে স্কুলে যায়।