খোন্দকার মো: মেসবাহুল ইসলাম ।।
কুমড়াজাতীয় সবজির মধ্যে সাধারণভাবে মিষ্টিকুমড়া, লাউ, কাঁকরোল, পটোল ও চালকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সম্ভবপর। এ ছাড়া শসা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও করলার ফুল ছোট হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় এদের পরাগায়ন করা যায়। এ জন্য ১০ থেকে ১২টি পুরুষ ফুল থেকে পরাগরেণু (তিন ভাগের এক ভাগ পানিভর্তি) একটি সাদা কাপে নিয়ে চিকন তুলির সাহায্যে স্ত্রী ফুলে পরাগরেণু ছুঁইয়ে দিয়ে স্থানান্তর করতে হয়।
কুমড়াজাতীয় সবজির ফল ধারণ শুধু ফলনশীলতা, গাছের পুষ্টি, রোগবালাই ও পোকামাকড় মুক্ততা এবং আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে না, নির্ভর করে গাছে কত ফল বিদ্যমান তার ওপরও। গাছে যদি বাড়ন্ত ফল বেশি থাকে তাহলে গাছের তৈরি খাদ্য সেগুলোতে বেশি সঞ্চিত হতে থাকে। এ অবস্থায় নতুন কুঁড়ি বা ফুল কম ধরে এবং ফল ধারণও কমে যায়।
কুমড়াজাতীয় সবজির পরাগায়ন সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন পোকার মাধ্যমে বিশেষ করে মৌমাছি, বোলতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু কখনো কখনো পোকার পর্যাপ্ত উপস্থিতি না থাকায় কুমড়াজাতীয় সবজির পরাগায়ন হয় না এবং কচি ফল হলুদ হয়ে ঝরে যায়। এ ছাড়া পুরুষ ফুলের সংখ্যা কম থাকায় বা না থাকায়, একই সময়ে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পরিপক্ব্তা লাভ না করায়, ক্ষতিকর পোকা পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড বা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ড খেয়ে ফেললে অথবা বৃষ্টিতে পরাগরেণু ধুয়ে নষ্ট হলেও পরাগায়ন হয় না। অপরাগায়িত স্ত্রী ফুল ঝরে পড়ে।
এসব কারণে কুমড়াজাতীয় সবজির ফলন বাড়াতে কৃত্রিম পরাগায়ন প্রয়োজন হয়। কৃত্রিম পরাগায়নে ৩০ ভাগ ফলন বাড়ে। কুমড়াজাতীয় সবজির পুরুষ ও স্ত্রী ফুল সংগ্রহ করে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজটি করতে হয়।
পরাগায়নের সময় : সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অথবা সকালে যতক্ষণ পর্যন্ত রোদের তাপ কম থাকে (যা শরীর স্বাভাবিকভাবে সহ্য করতে পারে) ততক্ষণ পর্যন্ত পরাগায়ন করা যায়।
পরাগায়ন পদ্ধতি : পুরুষ ফুলের পাঁপড়ি একটি একটি করে গোড়ার দিকে আস্তে করে টেনে টেনে ছিঁড়ে পরাগদণ্ডটি উন্মুক্ত করতে হয়।
স্ত্রী ফুলের পাঁপড়িগুলো হাত দিয়ে আলতো করে নিচের দিকে চেপে ধরতে হয়, যাতে পাঁপড়ির গোড়া ভেঙে না যায়।
এর পর পুরুষ ফুলটি স্ত্রী ফুলের গর্ভদণ্ডের মাথার কাছাকাছি নিয়ে সংস্পর্শ ছাড়াই পুরুষ ফুলে আস্তে করে টোকা দিতে হয়। এতে পরাগদণ্ড থেকে পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়ে। এভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে পাঁচ-সাতটি স্ত্রী ফুল পরাগায়িত করা যায়।
পরাগায়নের সময় লক্ষণীয় : মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের জোগান অবশ্যই থাকতে হয়। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড দিয়ে স্ত্রী ফুলের পরাগদণ্ড কখনোই ঘষে না দেয়া ক্ষেতে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়।
পরাগায়নের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। দিনের সময় যত বেশি যায়, তাপমাত্রা বাড়ে আবার তাতে পরাগরেণু শুকিয়ে পরাগায়নের অনুপযুক্ত হয়ে যায়।
কোনোভাবেই যেন পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
দূর থেকে কোনো পুরুষ ফুল সংগ্রহ করতে হলে তা পাঁপড়িসহ সংগ্রহ করতে হয় এবং পলিব্যাগে পরিবহন করেত হয়।
দূর থেকে আনা বা কাছাকাছি থেকে সংগ্রহ করা পুরুষ ফুল দিয়ে দ্রুত কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ শেষ করতে হয়।
সূত্র : নয়া দিগন্ত