ফরহাদ আহাম্মেদ ।।
ভারতের পাঞ্জাব, মুশিদাবাদসহ কয়েকটি প্রদেশে বার্ড ফু সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শীতের শেষ দিকে বার্ড ফুর ভাইরাস সক্রিয় হয় বেশি। ভারত ও আশপাশের দেশ থেকে ডিম বাচ্চাসহ বিভিন্ন পোলট্রি সামগ্রী বাংলাদেশে আনা হয়। এসব কারণে বাংলাদেশে বার্ড ফু সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি রয়েছে। শেষ খবর হলো, দেশের কয়েকটি এলাকায় ইতোমধ্যেই বার্ড ফু দেখা গিয়েছে। এর আগে বার্ড ফু’র সংক্রমণে দেশের পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এবার যাতে বার্ড ফু’র ভাইসাস দেশের অন্যান্য এলাকার হাঁস-মুরগির খামারে সংক্রমণ না ঘটাতে পারে সে জন্য প্রতিরোধমূলক জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনই জোড়দার করা উচিত। এ ছাড়াও রাণীক্ষেত, গামবোরো, বসন্ত ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত রোগ এ সময় বেশি হয়। এসব রোগের প্রতিকার নেই বলে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই একমাত্র উপায়। কোনোভাবেই যাতে জীবাণু খামারের ভেতর প্রবেশ না করে এ জন্য জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
১. খামারের প্রধান গেট তালা দিয়ে রাখতে হবে। ‘ জৈব নিরাপত্তা চালু আছে, প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। ২. খামারের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ৩. খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্যপাখি আসবে। বন্যপাখি বার্ড ফুর ভাইরাস বহন করে। ৪. দর্শনার্থীদের এবং অন্য খামারের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। ৫. খামারের ভেতরে নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্র্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। ৬. খামারের ভেতর প্রবেশের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে। এসব কিছুতে জীবাণুনাশক পদার্থ স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৭. খামারের ভেতর যারা থাকবে বা প্রবেশ করবে তাদের পরিধেয় সবকিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে। ৮. মুরগির ঘরের দরজ বন্ধ রাখতে হবে। যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে। ৯. এক খামারের লোক অন্য খামারে গোসল করে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে। জীবাণু এক খামার থেকে অন্য খামারে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে হবে। ১০. খামারের কর্মীদের বন্যপাখির দোকানে খাওয়া যাবে না। ১১. খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে। ১২. প্রতিটি শেডের সামনে পা ধোয়ার জীবাণুমুক্তকরণ তরল পদার্থ রাখতে হবে। শেডে প্রবেশের সময় পা জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করতে হবে। ১৩. পশুসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা, ডিম, খাদ্য ও সরঞ্জামাদি আমদানি নিষেধ। ১৪. দেশের ভেতর থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে, ওই খামারের গত এক বছরে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কি না। ১৫. অতিথি পাখি খামারের আশপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। খামারের কর্মীদেরও অতিথি পাখির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ শীতকালে বিভিন্ন দেশে থেকে এ দেশে অতিথি পাখি আসে। পাখিগুলো বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করতে পারে। ১৬. কোনো হাঁস-মুরগি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সাথে সাথে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে জানাতে হবে। ১৭. মৃত মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। ১৮. খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটি মাত্র পথ চালু থাকবে। ১৯. মুরগি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে খামারে প্রবেশ করতে হবে। কারণ যেখানে মুরগি ও ডিম বিক্রি করা হবে, সেখানে অন্য মুরগি থেকে জীবাণু আসতে পারে। ২০. অবিক্রিত মুরগি ও ডিম খামারের ভেতর নেয়া যাবে না। ২১. হাঁস-মুরগিকে সময়মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে। ২২. মুরগি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না। ২৩. অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করা, বিক্রি বন্ধ করা এবং অতিথি পাখির কাছে যাওয়া নিষেধ। ২৪. বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কেনা মুরগি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়িতে মুরগির সাথে রাখতে হবে। ২৫. খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক, টুপি ও এপ্রোন ব্যবহার করতে হবে। ২৬. এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না। ২৭. রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগির বিষ্টা, ময়লা, বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। ২৮. শেডের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে এবং শুকনা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ২৯. মুরগির ঘরে কাজ করার সময় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ রাখতে হবে। ৩০. মুরগির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে মুরগি পরপর দুই দিন ২০ শতাংশ হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পর পর দু’দিন ২০ শতাংশ হারে কমলে। ৩১. লেয়ার মুরগির বিষ্টা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। ৩২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সুষম ও টাটকা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
জীবাণুনাশক হিসেবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ভিরকন, ফার্ম ফুইড, ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক : কৃষিবিদ
সূত্র : নয়া দিগন্ত